সাংবাদিকদের নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানাল আরএসএফ
ড. ইউনূসের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে আরএসএফ। ছবি: সংগৃহীত
জুলাই-আগস্ট হত্যা মামলায় ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের নাম আসার বিষয়টি ‘পুরোনো আইন ও চর্চা’র ফল— বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)।
সেই সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাঠামোগত সংস্কারের পথে এগিয়ে যেতে তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
আরএসএফ বলছে, ড. ইউনূসের এই বক্তব্য উৎসাহব্যঞ্জক আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, যা ইঙ্গিত দেয়— যে ‘প্রতিশোধ গ্রহণের’ ধারায় গত সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক সাংবাদিক ভুক্তভোগী হয়েছেন, শিগগিরই সে অবস্থার অবসান ঘটতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠনটিতাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বুধবার ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারকে একটি সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা হত্যা মামলা নিয়েও কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে ভিত্তিহীন হত্যা মামলা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস জুলাই-আগস্ট হত্যা মামলায় ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের নাম আসার বিষয়টি ‘পুরোনো আইন ও চর্চা’র ফল বলে মন্তব্য করেন। তড়িঘড়ি করে মামলা করতে গিয়ে এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার এ ‘স্বীকারোক্তিকে’ স্বাগত জানিয়েছে আরএসএফ।
আরএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষাৎকারে এ ধরনের মামলা করা বন্ধে তার অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। পাশাপাশি যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তি আছে কিনা, তা একটি কমিটি পরীক্ষা করে দেখবে বলে জানান তিনি।
তবে এ প্রক্রিয়ার কোনো সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়নি উল্লেখ করে আরএসএফ বলেছে, এটি (ড. ইউনূসের ওই বক্তব্য) একটি উৎসাহব্যঞ্জক সরকারি ঘোষণা। এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যে ‘প্রতিশোধ গ্রহণের’ ধারায় গত সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক সাংবাদিক ভুক্তভোগী হয়েছেন, শিগগির সে অবস্থার অবসান ঘটতে পারে।
সাক্ষাৎকারে ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের বিষয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ কার্ড বাতিল করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাজ করতে বাধা দেবে না। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত হবে শুধু।
এ প্রসঙ্গে আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান সিলিয়া মার্সিয়া বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বরাদ্দ ও বাতিল করার ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ ও অরাজনৈতিক পদ্ধতি থাকা জরুরি।
ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নিপীড়নমূলক বিচারপ্রক্রিয়া থেকে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আরএসএফ।
সংগঠনটি বলেছে, আইনের শাসনের প্রতি সংগতি রেখে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা দেখাতে হবে।
নিপীড়নমূলক বিচারপ্রক্রিয়া থেকে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আরএসএফ। সংগঠনটি বলেছে, আইনের শাসনের প্রতি সংগতি রেখে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারের প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা দেখাতে হবে।
সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, আমরা অতীতের সবকিছু ছাপিয়ে যাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি। আমরা যেন একই ভুল আর না করি। আমাদের সত্য পথে ও অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। আমরা যদি ভুল করি, সেগুলো আমাদের ধরিয়ে দিন। আমরা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে গুরুত্ব দিই। আমরা কী করতে পারি, সে বিষয়ে আপনাদের প্রতিক্রিয়া আমাদের সাহায্য করবে, নচেৎ তা এড়িয়ে যেতে পারে।
তার এ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে আরএসএফ।
আরএসএফ তাদের প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের একটি বক্তব্যের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি ‘জুলাই গণহত্যায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি আলোচনায় শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় কী ঘটেছিল, সে সত্য আমলে না নিলে আরএসএফের মতো সংগঠনগুলো (বর্তমান) বাস্তবতা উপেক্ষা করবে। আরএসএফ তার এ বক্তব্য আমলে নিয়ে বর্তমান সরকারকে সাংবাদিকদের প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রায় ১৪০ জন সাংবাদিক ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগে করা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ মামলার আসামি হয়েছেন। গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে ২৫ জন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে। পূর্ববর্তী কোনো ধরনের অনুসন্ধান ছাড়াই এসব মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন পাঁচজন সাংবাদিক।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি