News Bangladesh

আসাদুল হক খোকন || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ২১ নভেম্বর ২০২৪
আপডেট: ১৭:৩৭, ২১ নভেম্বর ২০২৪

দেশের ক্রান্তিলগ্নে সশস্ত্র বাহিনী আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল

দেশের ক্রান্তিলগ্নে সশস্ত্র বাহিনী আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল

বক্তব্য দিচ্ছেন সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবছর ২১ নভেম্বর দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয় সশস্ত্র বাহিনী দিবস। এবারও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূথ্থানে গত ৫ আগস্ট ও তার পরে সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান, সেনাবাহিনী এবং সার্বিকভাবে সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। বিষয়টি সচেতন মহলসহ দেশের সকল সাধারণ মানুষ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়ানো সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সব সদস্যকেও। 

সেনাবাহিনী প্রধান, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানদের এবং তার সহযোগী অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দেশের ক্রান্তিকালে সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে যেভাবে দেশ ও জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন, তাতে আবারও প্রমাণিত হয়েছে দেশের জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল একমাত্র সশস্ত্র বাহিনী। 

বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সেনাপ্রধান তথা সেনাবাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসে। তিনি সময়োচিত এবং সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটার পরিবর্তে আমাদের হয়তো দেখতে হতো ভিন্ন একটি চিত্র। যার জন্য জাতি প্রস্তুত ছিল না। হয়তো স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের নাম থাকতো হাসিনার- সন্ত্রাসী-অপরাধীর তালিকায়।

এই ভয়াবহ চিত্র আমাদের দেখতে হয়নি। এই গভীর আশঙ্কা থেকে বেঁচে গিয়ে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি শুধুমাত্র সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামানের দুরদর্শী ও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তের কারণে। আর দেশ ও জাতি রক্ষা পেয়েছে গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে। তার সেই সিদ্ধান্তকে কাজে পরিণত করে যারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করে সাধারণ অসহায় ছাত্রজনতার কাতারে সামিল হয়েছেন সেই সৈনিকদেরও মানুষ মনে রাখবে বহুকাল

হাসিনার নির্দেশমতো জেনারেল ওয়াকার আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশ দিতে পারতেন। নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি করার যাবতীয় সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং এর পরিবর্তে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। এভাবে সেনাবাহিনী জনতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। এটা ছিল বাঁকবদলকারী এক দুর্দান্ত সিদ্ধান্ত।

১৯৭১ সালে এই সেনাবাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছিল। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে না গিয়ে সেনাবাহিনী জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিল। সেই সংকটময় সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ নূরউদ্দীন খান। ৩৪ বছর পর আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গসহ গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর। এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে সশস্ত্র বাহিনীর।

আমরা যদি একটু পেছন ফিরে তাকাই তবে দেখতে পাবো ঘটে যাওয়া অভ্যুথ্থানে বেশকিছু ঘটনা মোকাবিলায় এর অভ্যন্তরের চিত্রে ছিল সুক্ষ্ণ চিন্তার ছাপ। উদাহরণ হিসেবে- গত ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান সেনা সদরে বিভিন্ন স্তরের সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে সেনাপ্রধান উপলব্ধি করেন যে সেনা কর্মকর্তারা সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো হত্যাকাণ্ডের অংশীজন হতে চান না। এছাড়া ৪ আগস্ট আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে রাওয়াতে। সেদিন সেনাবাহিনীর কিছু অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। দ্রুত এ খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।

অন্যদিকে, একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- গসৈত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতা যেভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান দেখিয়েছে বং একাত্ম করে নিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। সামনে কি ঘটছে তা ধুয়াশাচ্ছন্ন থাকলেও সেনাবাহিনীর সদস্যদের আচরণে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে এই বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল যে, আন্দোলনে সেনাবাহিনী স্বৈরাচারের সঙ্গে নেই।  আছে- সাধারণ নির্যাতিত মানুষের পাশে।

২০২৪-এর এই গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সংকটময় সময়ে বর্তমান সেনাপ্রধান যেভাবে দেশের দায়িত্বভার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রায়-নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সংকট ও এর সমাধানে সরকারকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে সশস্ত্র বাহিনী। দেশের এই চরম সংকটে যখন বাংলাদেশ পুলিশের নিষ্ক্রিয় অবস্থান তখন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সরকার গঠনের প্রথম দিকে সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানেও এর ধারাবাকিতা বজায় আছে। 

পৃথিবীর ইতিহাস বলে- স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তার অপকর্ম এর সঙ্গীরা তৎপর থাকে। চলতে থাকে দেশে ও বিদেশে বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র। ইউনূস সরকারের ক্ষেত্রেও এর ব্যাপ্তয় ঘটেনি। ডাকাতি, জুডিসিয়াল ক্যু, আবৈনসার বিদ্রোহ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ড, আনসার বিদ্রোহের মতো নানা কৌশলে সরকারকে বিপদে ফেলার ক্রমাগত অপচেষ্টা হয়েছে। কৌশল বিবেচনা করে এসব ঘটনা দমনসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সেনাবাহিনী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। 

তাছাড়া ফেনী-কুমিল্লা অঞ্চলে বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে মানবতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল সশস্ত্র বাহিনী।

স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ জাতির সকল দুর্যোগ, ক্রান্তি মোকাবিলায় অনন্ত্র প্রহরী হয়ে আমাদের পাশে থেকেছে সশস্ত্র বাহিনী। এ কারণে সশস্ত্র বাহিনীকে যে কোনো বিরূপ পরিস্থিতে হৃদয়ের সব চেয়ে আস্থার জায়গাটিতে স্থান দিয়েছেন দেশের আপামর জনসাধারণ। যার বাস্তব চিত্র দেখা গেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা ছাত্র-জনতার অভ্যুথ্থানের সময়ও।
লেখক: নিউজ এডিটর, নিউজবাংলাদেশ.কম

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়