পুলিশ ভেরিফিকেশনে থাকছে না রাজনৈতিক বিবেচনা
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক বিবেচনা থাকছে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সফর রাজ হোসেন বলেন, আমরা পুলিশ সংস্কার কমিশনের সব সদস্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছি। অক্টোবর মাসের ৬ তারিখ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর কমিশনের রিপোর্ট দাখিল করার কথা রয়েছে। আমরা মোটামুটি মধ্য সমযয়ে এসেছি। প্রাথমিক পর্যায়ে বেশকিছু কাজ করেছি। এটাকে একটা খসড়ার চূড়ান্ত রূপ বলা যায়।
তিনি বলেন, আমরা যেসব সুপারিশ করছি এর কিছু কিছু বিষয় স্বল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সরকারি আইন ও বিধিবিধান পাল্টাতে হবে। আমরা এগুলো সুপারিশ করছি। আমাদের শুধু সুপারিশ করার দায়িত্ব।
কমিশনের প্রধান বলেন, একটা বিষয়ে আমরা সম্প্রতি আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে আসছি। সরকারি, আধাসরকারি কিংবা ব্যাংকের চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনের এই পদ্ধতি ১৯২৮ সাল থেকে হয়ে আসছে। এটা প্রায় ৯৬ বছর ধরে চলছে। ব্রিটিশ আইনের ম্যানুয়াল অনুযায়ী এখানে কয়েক ধরনের প্রশ্ন এবং তদন্ত করা হয়। এতে অনেক সময় অনেক চাকরিপ্রার্থী বাদ পড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়ত আরেকটি বিষয় প্রচলিত আছে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কেউ রাজনীতি করে কি না এবং রাষ্ট্রবিরোধী কেউ আছে কি না। এটা ব্রিটিশদের আঙ্গিকে চিন্তা করা হতো। সম্প্রতি এমন একটি অভিযোগ এসেছে যে কারও আত্মীয়স্বজন রাজনীতি করে কিন্তু সরকারি দল করে না, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে এসব যুক্তি দেখে চাকরি দেওয়া হয়নি। দেখা গেছে, তাদের খালা, ফুফা বা অন্য কেউ রাজনীতিতে জড়িত। পরিবারের কেউ না হলেও তারা চাকরি বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা এই প্রথা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করছি।
ব্যাংকের একজন গার্ড থেকে ক্লার্ক সবার চাকরি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে কেউ চাকরিতে ঢুকতে পারে। পরে দেখা যেতে পারে যে সে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং ভেরিফিকেশন জরুরি। যেভাবেই হোক পুলিশ ভেরিফিকেশনে যেন ভোগান্তি না হয় সেই বিষয়ে সুপারিশ করেছি। সুতরাং পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে কিন্তু সেখানে আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক বিবেচনা আমলযোগ্য হবে না বলে জানান তিনি।
সফর রাজ হোসেন বলেন, আমরা পুলিশ সংস্কার কমিশনের সব সদস্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছি। অক্টোবর মাসের ৬ তারিখ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর কমিশনের রিপোর্ট দাখিল করার কথা। আমরা মোটামুটি মাঝামাঝি সময় এসেছি। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে বেশকিছু কাজ করেছি। এটাকে একটা খসড়ার চূড়ান্ত রূপ বলা যায়। আমরা যেসব সুপারিশ করছি, এর কিছু কিছু বিষয় স্বল্প সময় বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এছাড়া কিছু কিছু বিষয়ে রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘসময় প্রয়োজন হবে। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আইন ও বিধিবিধান পাল্টাতে হবে। আমরা এগুলো সুপারিশ করছি। আমরা শুধু সুপারিশ করার মালিক।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন দুটি কড়া আইন রয়েছে। ৫৪ ধারা অনুযায়ী পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করতে পারে। আরেকটি ১৬৭ ধারায়, যেখানে পুলিশ রিমান্ডে নেয়। এ দুটি ক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নই। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও মালিক না৷ এটা সিআরপিসি। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন। এসব বিষয়ের কারণে আমরা আইন মন্ত্রণালয় থেকেও একজন যুগ্ম সচিবকে এই সংস্থার কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করেছি।
কমিশন প্রধান বলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি দীর্ঘদিন হলো এসব বিষয় নিয়ে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। ব্লাস্ট নামে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেন এ বিষয়ে একটি রিট করেছিলেন। ওই রিটে হাইকোর্ট বলেছিলেন এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো গাইডলাইন দিয়ে দেয়। পরে এ বিষয় নিয়ে সরকার অ্যাপিলেট ডিভিশনে যায়, সেখানেও অ্যাপিলেট ডিভিশন থেকে বলা হয় এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনার আগেই দেওয়া আছে। অর্থাৎ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ এবং সরকারের অন্য সংস্থাগুলোকে বেশকিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে অবশ্যই তার পরিবারের লোকজনকে সেটা জানাতে হবে। এটা হাইকোর্টের একটি রায়। আপনারা জানেন হাইকোর্টের রায় আইনের একটি অংশ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি