১০০ দিনে ৮৬২৭৭ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি: যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা
১০০ দিনের অগ্রগতি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
গত ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৮৬ হাজার ২৭৭ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কার্যক্রমের অগ্রগতি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ। তাদের মধ্যে ২৬ লাখ হলো গ্রাজুয়েট বেকার। আগামী দুই বছরে ৫ লাখ বেকারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। গেলো ১০০ দিনে রাজস্বসহ বিভিন্ন খাতে ৮৬ হাজার ২৭৭ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী দুই বছরে ৫ লাখ বেকারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
আসিফ মাহমুদ বলেন, কর্মসংস্থানের অংশ হিসেবে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী হিসেবে কাজ করবে শিক্ষার্থীরা। যেখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই কাজ পাবে। ২ হাজার ১০০ জনের চাকরি হবে। তাদের মধ্যে ২৩১ জন কাজ শুরু করেছে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী হিসেবে। বাকিদের নিয়োগ শিগগিরই দেওয়া হবে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, একটি ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছি। তবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো রয়েছে। আমরা জনগনের কাছে জবাবদিহিতা দিতে বাধ্য। গত ১০০ দিনে সরকারের আরও কিছু করার ছিলো। তবে তা হয়তো করা যায়নি। আগামী তিন মাসে এর দ্বিগুণ কাজ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরবরাহ থাকার পরও কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী। সিন্ডিকেটের কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বর্তমানে সরকার কঠোরভাবে বাজার তদারকি করছে। আলু ও সবজির সরবরাহ বৃদ্ধির পরও দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখা হবে।
সংস্কারের প্রসঙ্গে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিশনগুলোর সুপারিশ পাওয়া যাবে। এরপর তা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলসহ স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করা হবে। তারপর নির্বাচনের দিকে যাবে সরকার।
বিসিবি প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, বিসিবিতে রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল। তা না হলে ক্রিকেট বোর্ডে পরিবর্তন হতো না। বোর্ড এখন জোড়াতালি দিয়ে চলছে। তবে নতুন পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে স্থবিরতা কাটানোর চেষ্টা চলছে। জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রতিবছর ফেডারেশনগুলো কার্যক্রমের তথ্য ও অডিট রিপোর্ট দিবে। কেউ দুর্নীতি করলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
তিনি আরও বলেন, ফুটবলসহ কিছু ফেডারেশন স্বায়ত্তশাসিত। তাই সেখানে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে ফেডারেশনগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিভিন্ন কমিটি করে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেখানে স্থবিরতা রয়েছে সেখানে নতুন কমিটি করে সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী জানান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের সরকারি-বেসরকারি কর্মে নিয়োজিত করা এবং আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৮০ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত ১০০ দিনে ১৯ হাজার ৪৫২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে ৫২ হাজার ১১৫ জন প্রশিক্ষণরত।
তিনি বলেন, বিগত ১০০ দিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বিপিএসসি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজস্ব ও প্রকল্প খাতে নতুন ৮৬ হাজার ২৭৭ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে রাজস্ব খাতে দুই হাজার ৪৬৮ জন এবং প্রকল্প খাতে (আত্মকর্মী ও উদ্যোক্তা) ৮৩ হাজার ৮০৯ জন। দুই বছরে সরকারিভাবে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সচেতনতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সে মোট সাতটি ব্যাচে দুই হাজার ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭১০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের সহায়ক পুলিশ হিসেবে ২৩১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং অবশিষ্ট নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ সময় শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, গার্মেন্টস খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো ও শ্রম অসন্তোষ কমাতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এরইমধ্যে ফৌজদারি অপরাধে মালিক ও শ্রমিক মিলে ১২৮ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। বেক্সিমকো প্রতি মাসে গার্মেন্টস খাতে ৮২ কোটি টাকা বেতন দেয়। এতো টাকার দায় সরকার নিতে পারবে না। এজন্য করণীয় নির্ধারণে সরকার কাজ করছে। এরইমধ্যে তিনটি গার্মেন্টস কারখানার আর্থিক সহায়তা দিয়ে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি