‘রাষ্ট্রীয় গোপন নথি’র উল্লেখ নেই জব্দ তালিকায়
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে জব্দ করা জিনিসের যে তালিকা করা হয়েছে, তাতে সরাসরি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি বিষয়ক কোনো গোপন নথি নেই। যদিও তার বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে এ ধরনের নথির কথা উল্লেখ ছিল।
জব্দ তালিকায় চারটি নথির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পাঠানো দুই পাতার একটি চিঠি।
দ্বিতীয়টি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় ব্যবহৃত চিকিৎসা সামগ্রী কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোর (সিএমএসডি) পরিচালকের ৫৬ পাতার একটি চিঠি। এ চিঠি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হচ্ছিল।
জব্দ তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য তৈরি করা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত দুই পাতার একটি সারসংক্ষেপ।
চতুর্থ ও শেষ নথি হিসেবে আছে করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির অনুমোদন বিষয়ক দুই পাতার একটি ফটোকপি।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী যে মামলা করেছেন, তার এজাহারে রোজিনার বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে— এমন নথি সরানোর অভিযোগ আনা হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকা কেনা/সংগ্রহ সংক্রান্ত আলোচনা এবং খসড়া সমঝোতা স্মারক ও অ-প্রকাশ্য চুক্তি প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষগুলোর মাঝে প্রতিনিয়ত চিঠি ও ই-মেইল যোগাযোগ হচ্ছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে।’
কিন্তু, জব্দ তালিকায় টিকা সংক্রান্ত দুই পাতার ফটোকপিটির কথাই শুধু উল্লেখ আছে।
জব্দ তালিকার তথ্য অনুসারে, রোজিনার কাছ থেকে ‘জব্দ করা’ সবকিছু আসলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের জিম্মা থেকে উদ্ধার করা হয়।
গত ১৮ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে, এমন নথি সরিয়েছেন রোজিনা।”
বৃহস্পতিবার রোজিনার জামিন আবেদনের শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “রোজিনা চীন ও রাশিয়া সম্পর্কিত গোপন নথি নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং এগুলো তার শরীরের ‘বিশেষ স্থানে’ লুকানো ছিল।”
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, “তিনি সংবেদনশীল তথ্য চুরি করেছেন। নারী হলেও বাংলাদেশকে তিনি বিব্রত করেছেন।”
রোজিনার পক্ষের আইনজীবী সে সময় রোজিনার তথ্য জানার অধিকারের কথা তোলেন।
মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিষয়ে বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখেছিলেন রোজিনা। এসব প্রতিবেদনের বেশিরভাগই কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সরঞ্জাম কেনায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ক।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব প্রতিবেদনের জন্যই রোজিনাকে টার্গেট করা হয়েছে। জব্দ তালিকায় থাকা সবচেয়ে বেশি পৃষ্ঠার নথিটিও কোভিড-১৯ সরঞ্জাম কেনা সংক্রান্ত তথ্যের ফটোকপি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ