লুবনানের বিরুদ্ধে সাড়ে ৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা
পোশাক বিপননকারী লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ফাঁকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম হোমস্টিড গুলশান লিংক টাওয়ারে টিএ-৯৯ (১২তলা)। এর মূসক নিবন্ধন নম্বার ০০০৮৪১৭৯২-০১০১। প্রতিষ্ঠানটির মূলত তিনটি ব্রান্ড। এগুলো হলো রিচম্যান আ্যাপারেলস, ইনফিনিটি মেগা মল ও লুবনান এথনিক উইয়ার। রাজধানীর বড় বড় শপিংমলসহ সারা দেশে ১০৮টি বিপনী কেন্দ্র রয়েছে।
একজন গ্রাহকের সুনির্দিষ্ট ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ থাকায় ভ্যাটের সহকারী পরিচালক মো. মাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাড্ডায় প্রতিষ্ঠানটির কারখানা এবং অফিসে অভিযান চালায়। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানের উপস্থিত প্রতিনিধির সহযোগিতায় বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ২০১৬ সালে জুলাই হতে ২০২০ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ১০৮টি শাখার জমাকৃত মূসকের সারসংক্ষেপের হিসাব (রিটার্ন অনুযায়ী), বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র, সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট, কর্পোরেট চালানের কপি ও আমদানি এলসি সমূহের তথ্যসহ আনুষাঙ্গিক বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করা হয়।
সরেজমিনে একইসাথে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য দপ্তর হতে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ভ্যাট গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানটির মূসক ফাঁকির
প্রমাণ পেয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য অনুসারে তদন্ত মেয়াদে বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ৩৯ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৭ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৮ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রযোজ্য এই ফাঁকিকৃত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯৫ লাখ ২০ হাজার ৯২৯ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।
অন্যদিক, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৩৬৮ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ লাখ ১৩ হাজার ৭১২ টাকার ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির উপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক গত ফেব্রুয়ারি ৭৫ হাজার ১৮ টাকা সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া তদন্ত মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট মোতাবেক উৎসে ভ্যাট ৩ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৫ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৯৪ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৫ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। উৎসে কর্তনের উপর প্রযোজ্য এই ফাঁকিকৃত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪০ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে। বর্ণিত তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪ টাকা এবং সুদ বাবদ ১ কোটি ১০ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৭ টাকাসহ ৪ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার ৪৪২ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।
তদন্তে আরও দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরের অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে মাসিক রিটার্নে অসত্য তথ্য প্রদান করা এবং ভুয়া ভ্যাট চালান ইস্যু করা। এসকল অনিয়ম ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ এনে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর আজ এসংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা করেছে। তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরে প্রেরণ করা হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএজেড/এএস