গাছ কাটার ঘটনায় কারও অবহেলা থাকলে ব্যবস্থা: মন্ত্রী
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটার ঘটনার তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের কোনো অবহেলা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুধুমাত্র ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য যদি গাছ কাটা হয়ে থাকে তা দুঃখজনক। কারো যদি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অসাবধানতার কারণে যদি গাছ কাটা হয়ে থাকে তা তদন্ত করে আমরা দেখবো। অবহেলা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবেশবিদ, উদ্যানবিদ, নগরবিদ ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ঈদের পর সভা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের পরামর্শে প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় তাও করা হবে।
স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু গাছ ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। কাটার জন্য আরও কিছু গাছ চিহ্নিত করা হয়েছে।
সেখানে ‘রেস্তোরাঁ ও হাঁটার পথ’ নির্মাণের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন প্রতিবাদকারীরা।
ওই ঘটনায় করা এক রিট আবেদনে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আপাতত গাছ কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
পাশাপাশি পরিবেশবিদ, উদ্যানবিদ ও নগরবিদদের পরামর্শে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ১০ গুণ বেশি গাছ লাগানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত ৫০টি গাছ কাটা হয়েছে। এখন যে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে হয়তো আরও ৫০টি গাছ কাটা লাগতে পারে। তবে যতটুকু সম্ভব মিনিমাইজ করে যত কম গাছ কাটা যায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
আপাতত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আর কোনো গাছ কাটা হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা সেখানে আবার পরিদর্শন করব, কোনো দুষ্প্রাপ্য গাছ যদি কাটার তালিকায় থেকে থাকে তা যদি না কাটলে চলে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম সূতিকাগার ও অত্যন্ত আবেগের জায়গা উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ইতিহাসসহ দেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সাথে মিশে আছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।”
‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
মন্ত্রী জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ চলছে।
সেখানে পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির কার পার্কিং ও শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি