লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় বিভিন্ন জেলায় জরিমানা
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিন চলছে। সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ ও ‘লকডাউন’ কার্যকর করতে এবং সরকার ঘোষিত লকডাউনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সারাদেশে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে জনসাধারণকে সতর্ক করার পাশাপাশি বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানাও করছে।
জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
বান্দরবান: তৃতীয় দিনের মত বান্দরবানেও চলছে কঠোর লকডাউন। লকডাউনের কারণে বাজারের ওষুধের দোকান ও মুদি দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে সড়কে লোকজন ও যান চলাচল কম। এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, সর্বাত্মক লকডাউন সফল করতে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। অপ্রয়োজনে যারা মোটরবাইক ও রিকশা নিয়ে চলাফেরা করছে তাদের নিজ-নিজ ঘরে চলে যেতে নিদের্শনা দিচ্ছে পুলিশের সদস্যরা। এছাড়াও ঘোষিত লকডাউনকে আরো কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনের ৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে টিম কাজ করছে। এরই মধ্যে মূল্য তালিকা না টাঙানো, মেয়াদত্তীর্ণ পণ্য রাখা সহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন পরিমাণের জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বান্দরবান সদরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারের নিদের্শনা বাস্তবায়নে এবং করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা কাজ করছি।
কুমিল্লা (দক্ষিণ): জেলার চৌদ্দগ্রামে সরকার নির্দেশনা লকডাউন না মানায় পথচারী ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার আল আমিন সরকার। শুক্রবার দুপুর ১২টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম ও মিয়াবাজার এলাকায় ৪টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ১৪ জন পথচারীকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহযোগিতা করেন চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের একটি টিম। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার আল আমিন সরকার বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চৌদ্দগ্রাম ও মিয়াবাজার দু’টি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় সরকার নির্দেশনা লকডাউন না মানায় ৪টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও মাক্স না পড়ে অযথা বাজারে ঘুরাফেরা করায় ১৪ জন পথচারীকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই অভিযানে চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
ভোলা: জেলায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে ৬১ জনকে ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৮ টি অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করা হয়। এসময় ৫৭ টি মামলা দায়ের করা হয়। জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইউছুফ হাসান জানান, এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৭ জনকে ১০ হাজার ২০০ টাকা জরিমানা, দৌলতখানে ৭ হাজার ২০০ টাকা ৭ জনকে, বোরহানউদ্দিনে ৩ জনকে ২ হাজার টাকা, লালমোহনে ৮ হাজার ২০০ টাকা ২৩ জনকে, চরফ্যাসনে ১১ জনকে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। তিনি জানান, অভিযান চলাকালিন সময়ে নির্ধারিত সময়ের পর দোকান খোলা রাখা, অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে আসা, মাস্ক ব্যবহার না করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার দায়ে জরিমানা করা হয়। এসময় জনসাধারণকে লকডাউনের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে জেলায় করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্বক লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আজ তৃতীয় দিন বিভিন্ন সড়কে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক নজরদারী লক্ষ্য করা গেছে।
বগুড়া: সরকারি নির্দেশনা অমান্য এবং লকডাউনের শর্ত ভঙ্গের অপরাধে বগুড়ায় ৮৩টি মামলায় ৬৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত শহর এবং বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে। এতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ভূমি এবং জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযান চলাকালে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করেন। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাছিম রেজা জানান, জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযানে ১২ মামলায় ২১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলার মধ্যে- সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৪০০, আদমদিঘী ৮ মামলায় ২০ হাজার, ধুনটে এক মামলায় এক হাজার, দুপচাঁচিয়ায় ৯ মামলায় ৩ হাজার, গাবতলীতে ১০ মামলায় ৩ হাজার ৩০০, নন্দীগ্রামে ২ মামলায় দেড় হাজার, শাজাহানপুরে ২ মামলায় এক হাজার, সারিয়াকান্দি ১০ মামলায় ৮ হাজার ৯০০, শেরপুরে ২ মামলায় ৭০০, শিবগঞ্জে ৪ মামলায় ৪০০ এবং সোনাতলায় ১০ মামলায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়।
নোয়াখালী: জেলার ৯টি উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে নিষেধাজ্ঞা না মেনে নির্ধারিত সময়ের পরে দোকান খোলা রাখায় ৮৭ট মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলায় ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার নোয়াখালী সদর ও অন্যান্য উপজেলাগুলোতে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে দিনব্যাপী মোট ১০টিম এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান আজ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলাগুলোতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্ধারিত সময়ের পর দোকান খোলা রাখা, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘোরাফেরা করাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮৭টি মামলায় ৭৫হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিতকরণে জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে জানানো হয়েছে।
চাঁদপুর: সরকার ঘোষিত সাতদিনের লকডাউনের সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় চাঁদপুরে ৬৬ মামলায় ৫৭ হাজার ২৫০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ পৃথক-পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, চাঁদপুর শহরে ভ্রাম্যণ আদালতে ২৯টি মামলায় ৯ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। সকাল থেকে দুপুর এবং দুপুর থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত এসব ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উজ্জ্বল হোসেন, আবিদা সিফতা, ইবনে আল হোসেন জায়েদ ও দেবযানী কর। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, শহরের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একটি টেইলার্স খোলা রাখায় এবং স্বাস্থ্য বিধি না মানায় ৭ জনকে ১ হাজার ৫৫০ টকা জরিমানা করে সতর্ক করে দেয়া হয়। এদিকে হাজীগঞ্জ শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১২ মামলায় ২১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার জানান, সারাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ৭ দিনের কঠোর লকডাউন সঠিকভাবে পালনে প্রশাসনের কঠোর নজরদারী রয়েছে।
যশোর: জেলায় কঠোর লকডাউন কার্যকর হচ্ছে। লকডাউনের প্রথম দু’দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৮৪ মামলায় ৫৮ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। শহরের বেশ কয়েকটি প্রবেশ মুখে থাকছে পুলিশ প্রশাসন। এসব পথ দিয়ে মানুষ শহরে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে তাদের ফিরে যেতে হয়। ওসব পথ দিয়ে যদি কোন মানুষ রিকশায় বা মোটরসাইকেলে করে দড়াটানায় পৌঁছালে তাদের ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর মোটরসাইকেলে আসলে ট্রাফিক পুলিশ কাগজপত্র চেকিং করে জরিমানাও করেছে। সেকারণে শহরে ইজিবাইক চলাচল করেনি বললেই চলে। রিকশা ভ্যান চলাচল করলেও ছিল অনেক কম। সেই সাথে মানুষের চলাচলও কম ছিল। সন্ধ্যার পর শহরে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম ছিল। শহর ছিল ফাঁকা। এদিকে লকডাউনের দুই দিনে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় যশোরসহ অন্যান্য উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ৮৪ মামলায় ৫৮ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। ডিসি অফিস সূত্র জানায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম দু’দিনে ৪২টি মামলায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আাদয় করেছে। একই সাথে অভয়নগরে ১৪ মামলায় ৮ হাজার ৬০০ টাকা, কেশবপুরে ৬টি মামলায় ৫ হাজার ৮০০ টাকা, শার্শায় ৫টি মামলায় ৬ হাজার ৩০০ টাকা, ঝিকরগাছায় ৫টি মামলায় ৫ হাজার ৫০০ টাকা, মণিরামপুরে ৬টি মামলায় ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস