ভ্যাটের টাকা পরিশোধে নারায়নগঞ্জ ক্লাবকে ১৫ দিনের সময়
নারায়নগঞ্জ ক্লাবের বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলার ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা জমা দিতে আগামী ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। অন্যথায় ওই পাওনা ভ্যাট আদায়ে কঠোর অবস্থান নিবে সরকারি এই সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, রাজস্ব ফাঁকির এক মামলায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট কর্তৃপক্ষ আজ ওই নোটিশ জারি করেছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মামলার সূত্রে ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেট থেকে ওই নোটিশটি জারি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবটি নারায়নগঞ্জের বঙ্গবন্ধু রোডে অবস্থিত।
আরও বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দা নারায়নগঞ্জের অভিজাত ক্লাবের বিরুদ্ধে ২০১১-১২ থেকে ২০১৪-২০১৫ পর্যন্ত ৪ বছরের হিসাব তদন্ত করে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি এই তথ্য বের করেছে। যথা সময়ে ভ্যাট পরিশোধ না করায় আরও ৩ কোটি ৮২ কোটি টাকার সুদ প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর তদন্ত প্রতিবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারের নিকট প্রেরণ করে। দীর্ঘ শুনানি ও মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ভ্যাট গোয়েন্দার দায়ের করা মামলার ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ বহাল রাখা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের জারি করা নোটিশে ভ্যাট গোয়েন্দার দাবি করা ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। একইসাথে, আগামি ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা জমা দিতে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই নোটিশ অনুসারে মূল টাকা জমা দেয়ার পর নতুন করে সুদ হিসাব করে তা আদায় করা হবে।
নির্ধারিত ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সমুদয় টাকা পরিশোধ করা না হলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইন অনুসারে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৭ কোটি ৫৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করে।
ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দার একজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল ক্লাবটির সেপ্টেম্বর ২০১১ সাল হতে আগষ্ট ২০১৫ সাল পর্যন্ত তদন্ত করে। ভ্যাট গোয়েন্দার দল তদন্তের স্বার্থে দলিলাদি দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার তলব করে। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ এতে তেমন সাড়া দেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আয়কর অফিস ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত বার্ষিক সিএ রিপোর্ট ও অন্যান্য দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে মামলার প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দা থেকে প্রতিবেদনটি ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯ সালে ঢাকা ভ্যাট দক্ষিণ কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সিএ ফার্মের রিপোর্টে প্রদর্শিত বিভিন্ন সেবার সরবরাহের বিপরীতে ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৮ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৩ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ২২৬ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। বিভিন্ন সেবার সরবরাহের বিপরীতে প্রযোজ্য এই ফাঁকি করা ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২ কোটি ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৫ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।
তদন্ত অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটি ক্লাব বারে মদ জাতীয় পণ্য সরবরাহের বিপরীতে প্রদেয় সম্পূরক শুল্ক বাবদ কোন টাকা পরিশোধ করেনি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৭ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৭ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি সরবরাহের বিপরীতে প্রদেয় সম্পূরক শুল্ক এর উপর প্রযোজ্য ওই ফাঁকিকৃত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৮ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।
অন্যদিক, তদন্ত অনুসারে নিরীক্ষা মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট মোতাবেক উৎসে ভ্যাট বাবদ কোন টাকা পরিশোধ করেনি।কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৩৯ লাখ ২ হাজার ৮৭৪ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১ কোটি ৩৯ লাখ ২ হাজার ৮৭৪ টাকার ফাঁকি উৎঘাটিত হয়। উৎসে কর্তনের উপর প্রযোজ্য ওই ফাঁকিকৃত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৫১ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।
ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ভ্যাট গোয়েন্দার প্রতিবেদনটি ভ্যাট আইন ১৯৯১ এর ধারা ৫৫(৩) অনুসারে সঠিক ও চুড়ান্ত বলে রায় দেয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস