এই ‘নমনীয়তা’ লইয়া আমরা কী করিবো?
এই ‘নমনীয়তা’ লইয়া আমরা কী করিবো, কোথায় রাখিবো? উহা বরং মিজান ভাইদের নিকটেই গচ্ছিত রাখিয়া দেওয়া উত্তম। উহা উক্ত স্থানেই মানাইবে ভালো!
খবরের কাগজে কাজ করিবার কালে প্রত্যুষে আমি বাটিতে অন্তত তিনচারখানা দৈনিক পত্রিকা দেখিবার সুযোগ পাইতাম। এক্ষণে সেইসব বিগত সুখস্মৃতি। স্বীয় অর্থ ব্যয় করিয়া একখানা মাত্র পত্রিকা রক্ষণ করা যাইতে পারে।
অনেক ভাবিয়া অপুষ্টিতে ভুগিতে থাকা পত্রিকার ভিড়ে রীতিমতো পরিপুষ্ট হইয়া ওঠা প্রথম আলোকেই একক হিসাবে বাছিয়া লইয়াছি। অদ্যও সেই প্রথম আলো পড়িতে যাইয়া প্রথম পৃষ্ঠাতেই গোচরে আসিলো জনাব মিজানুর রহমান খানের একখানা রচনা। উহার শিরোনাম ‘খালেদা জিয়ার বক্তব্যে নমনীয়তার ইঙ্গিত?’
উক্ত প্রশ্নবোধক প্রয়োগ করিয়া তিনি কাহার নিকট হইতে জবাব প্রত্যাশা করিলেন, তাহা না বুঝিলেও উপরে ‘সংবাদ বিশ্লেষণ’ লিখিত থাকিবার কারণে, বুঝিলাম রচনায় জনাব খান খালেদার বক্তব্যজনিক সংবাদ বিশ্লেষণ করিয়াছেন। উনি রচনায় ভো-কাট্টা ঘুড়ির সহিত তুল্য গমনপথ ধরিয়া একবার এই স্থানে অন্যবার ওই স্থানে গোঁত্তা দিয়া ‘নমনীয়’ খালেদাকে দেখাইতে চাহিয়াছেন। আমরা অতিমাত্রায় আশ্বস্ত হইয়াছি!
বুঝিয়াছি, বিগত কয়েক মাস যাবৎ ‘অনমনীয়’ খালেদা জিয়ার কর্মসূচিতে যে সন্ত্রাস এবং নাশকতা সংঘটিত হইয়াছে, তাহাদের হোতা হিসাবে ‘দুর্বৃত্ত’দিগকে মিজান ভাইয়েরা ছাপিবার হরফে ঠাঁই দিলেও তাহাদের মতো প্রচারসংখ্যার একখানা পত্রিকা এই পুরো সময় ধরিয়াও কেন একখানা বড় আকারের অনুসন্ধান চালাইয়া দুর্বৃত্তদিগের পরিচয় উন্মুক্ত করিতে পারিলো না! বুঝি না উহাদিগের এতো নমনীয়তার কারণ। এক্ষণে মিজান ভাইয়েরা খালেদা জিয়াকে ‘নমনীয়’ পাইতেছেন।
রচনার আসল উদ্দেশ্য প্রথম আলো ধারায় টোকা মারিয়া যায়, রচনার শেষভাগে। বলিবার চেষ্টা হইয়াছে, বিএনপি নেত্রী নমনীয় হইয়া পরিবেশ তৈয়ার করিয়া দিলেন, এইবার সরকার বাহাদুরই জনগণকে এই পরিস্থিতি হইতে উত্তরণ ঘটাইতে পারে। কয়েক মাস যাবৎ মানুষ হত্যা করিবার উপলক্ষ হইয়া ওঠা আন্দোলনের নামে কী চলিয়াছে, তাহা নতুন করিয়া বলিবার নাই। তাহারপরেও প্রথম আলো প্রথম পাতায় এইসব রচনা ছাপিতেছে। ভবিষ্যতেও ছাপিবে, সুনিশ্চিত।
এই ‘নমনীয়তা’য় আমাদের কী হইবে? রাষ্ট্রের যে বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হইয়াছে, উহার কী হইবে? মানুষ মরিয়া ছাই হইলো, পুড়িয়া পড়িয়া রইলো। উহাদের কী হইবে? এইসব প্রশ্ন লইয়া আমাদিগের মনের ভেতরে খোঁচাইতে থাকিবে। তাহারপরেও আমরা প্রথম আলোই পড়িবো। কারণ, তাহার সমকক্ষ হইবার সম্ভাবনা লইয়াও বহু পত্রিকা পিছাইয়া পড়িয়াছে। ভীষণ জরুরি হইয়া পড়িয়াছে, উহারা কেন পিছাইয়া পড়েন, তাহা খুঁজিয়া বাহির করিবার। সাদা চোখে যাহা দেখি, তাহাই কি শুধু? না অন্তরালে লুক্কায়িত অন্যকিছু?
মিজান ভাইয়েরা বরং এই ‘নমনীয়তা’ লইয়া থাকুন। আমরা না হয় খুঁজিয়া বাহির করিতে প্রচেষ্টা চালাইতে থাকি!
লেখক: সংবাদকর্মী
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএম
নিউজবাংলাদেশ.কম