অক্সিজেন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
দেশে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, করোনার সময় যখন অনেক চাহিদা উঠল, তখনই অক্সিজেন ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। গত চার থেকে পাঁচ দিন আমদানি বন্ধ আছে। দেশে সে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। কোভিড-১৯: মহাদুর্যোগে বিশ্ব, দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় জনসচেতনতার গুরুত্ব, সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু তরল অক্সিজেন দিয়ে কাজ করি না। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে আগেও অক্সিজেন ছিল। বাংলাদেশে গ্যাস অক্সিজেনের অভাব নেই। এর উৎপাদন সক্ষমতা অনেক।’
এ মুহূর্তে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে অক্সিজেন প্রয়োজন—এমন রোগী যদি ৭ হাজারের জায়গায় ২১ হাজার হয়ে যায়, তাহলে সংকট হবে। রোগী বাড়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারতেও সংকট হয়েছে। আমাদের দেশে রোগী কিন্তু কমেছে। অক্সিজেনের চাহিদাও কমেছে। সবাইকে সেভাবে চলতে হবে, যাতে রোগী আর না বাড়ে।’ তিনি আরও বলেন, অনেক শিল্পকারখানায় তরল অক্সিজেন তৈরি করা হয়, সেটাও রিজার্ভ করা হয়েছে। দেশের ৪০ থেকে ৫০টি হাসপাতালকে বলা হয়েছে গ্যাস অক্সিজেন ব্যবহার করতে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশে অক্সিজেনের উৎপাদন বেসরকারি খাতে প্রায় ১৫০ টনের মতো। এটা তরল অক্সিজেন। আর গ্যাস মাস্ক অক্সিজেন ২৫০ থেকে ৩০০ টন। দৈনিক দেশে অক্সিজেনের চাহিদা ১২৫ থেকে ১৫০ টন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছে। অতিরিক্ত চাপ না হলে অক্সিজেনের সমস্যা হবে না। শিল্প খাতে ব্যবহৃত ৪০ টনও বুকিং দেওয়া আছে। প্রয়োজন পড়লে সেটিও রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হবে।
নতুন টিকার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, নতুন টিকার অনুমোদনের জন্য ওষুধ প্রশাসনকে বলা হয়েছে। প্রক্রিয়া পালন করে অনুমোদনের ব্যবস্থা হচ্ছে। বেক্সিমকোর চুক্তি অনুযায়ী তিন কোটি টিকা আনার বিষয়ে সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সরকার ও বেক্সিমকো চেষ্টা করছে। টিকা রপ্তানিতে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেই তা আনা যাবে।
টিকা নিয়ে ব্যবসা, আন্তর্জাতিক একটা রাজনীতি চলছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা নিয়ে টানাপোড়েন আছে। টিকা তৈরির কাঁচামাল ভারতে ঘাটতি আছে। যেসব দেশ টিকার আবেদন করেছিল, এর মধ্যে চীনের টিকা, রাশিয়ার স্পুটনিক—এই দুটি টিকার আনুষ্ঠানিক কাগজ আমরা পেয়েছি। বাকিগুলো আবেদনের পর্যায়ে আছে। কার্যক্রম থেমে নেই। অনুমোদন অনেক দূর এগিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে অনুমোদন হয়ে যাবে।’
সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বারবার উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোয় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়। এসব এলাকার মানুষকে সজাগ হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, লকডাউন দুই সপ্তাহ ছিল। পরে এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। তবে লকডাউন একমাত্র সমাধান না। এটা সংক্রমণ কমাতে কার্যকর একটা ব্যবস্থা। পৃথিবীর সর্বত্র লকডাউন কমিয়েছে। তবে লকডাউনের নেতিবাচক দিকও আছে। তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, পড়াশোনার ক্ষতি, দারিদ্র্যের হার বেড়ে যায়, সামাজিক অস্থিরতা বাড়ে। আজকে লকডাউন চলছে বলে সংক্রমণের হার ২৪ থেকে ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান না। দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর সমাধান হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানা, ভিড়ে না যাওয়া ও টিকা নেওয়া।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস