News Bangladesh

জেলা সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:১১, ২০ এপ্রিল ২০২১

ভৈরব মোকামে ধানের দাম কমেছে মণে ১০০ টাকা

ভৈরব মোকামে ধানের দাম কমেছে মণে ১০০ টাকা

সুনামগঞ্জের শাল্লার হাওর থেকে ১ হাজার ৮০০ মণ ইরি (মোটা) ধান নিয়ে আলতাফ মাঝির নৌকাটি সোমবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব মোকামে নোঙর করে দুপুরে। প্রায় ৮ ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিয়ে আসা এই নৌকায় চারজন ব্যাপারীর ধান রয়েছে। তাদের একজন অনু মিয়া। অনু ব্যাপারীর মন ভালো নেই। কারণ, ধানের দাম কমছেই। বড় লোকসানের শঙ্কা পেয়ে বসেছে তাকে।

অনু ব্যাপারী বলেন, ‘মাঠে কৃষকের কাছ থেকে মোটা কিনছি ৭০০ টাকা মণ দরে। মোকামে এসে শুনি আজ এই ধান ৬৫০ টাকার ওপরে উঠছে না। বিআর-২৮–এর দামও একই হারে কমেছে। আবার পরিবহন খরচ আছে। আজকের (সোমবারের) বাজার অনুযায়ী সব মিলিয়ে মণপ্রতি গড়ে ৬০ টাকা করে লোকসান হয়ে যাবে।’

ধানের ভৈরব মোকামে এখন প্রতিদিন একটু একটু করে দর কমছে। বিশেষ করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ধান গড়ে মণপ্রতি ১০০ টাকা করে কমেছে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, হাওরাঞ্চলের, বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন; নেত্রকোনার খালিয়াজুরি; হবিগঞ্জের দিরাই, লাখাই, আজমিরীগঞ্জ; সুনামগঞ্জ ও সিলেটের কিছু অংশের বাণিজ্য ভৈরব–নির্ভর। যুগ যুগ ধরে নদীপথে ভৈরবের সঙ্গে ওই সব অঞ্চলের অর্থনৈতিক যোগসূত্র তৈরি হয়ে আছে। সড়ক যোগাযোগ ভালো হওয়ার পর ওই সব অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য কমে এলেও শেষ হয়ে যায়নি। সময়ের ব্যবধানে ভৈরব মোকামের জৌলুশ কিছুটা কমে এসেছে। তারপরও কিছু অংশের উৎপাদিত ধান ভৈরব মোকামের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। এই মোকাম থেকে ধান কেনেন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, লালমনিরহাট, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার ব্যবসায়ী ও মিলমালিকেরা।

এবার ভৈরব মোকামে নতুন ধানের আমদানি শুরু হয় ২৫ চৈত্র থেকে। পয়লা বৈশাখ থেকে আমদানি বাড়তে থাকে। কয়েক দিন ধরে আমদানি বেড়ে এখন প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার মণে ঠেকেছে। এক সপ্তাহ আগে বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকা দরে। ওই ধান আজ হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকায়। ইরি মোটা ধানেও একই হারে দর কমেছে। এক সপ্তাহ আগে ইরি মোটা বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা দরে।

সোমবার দুপুরে ভৈরব মোকামে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে ধানবোঝাই অসংখ্য নৌকা। নৌকা থেকে দুই শতাধিক শ্রমিক ধান পাড়ে তুলছেন। মোকামে ধানের মজুত বেড়ে চললেও ক্রেতা কম। ব্যবসায়ীরা জানালেন, আমদানির বিপরীতে বিক্রি কম থাকায় ঘাটে এখন ৬০ হাজার মণ ধান মজুত পড়ে আছে।

হবিগঞ্জের কাকাইলছেও হাওর থেকে ধান নিয়ে আসা মাঝি সঞ্জিৎ রায় বলেন, ‘আজকের (সোমবারের) দর জেনে কেউ খুশি হতে পারেননি। মণপ্রতি ৫০ টাকা নেই। এই দরে ধান বিক্রি করে কোনো ব্যাপারীর লাভের মুখ দেখার সুযোগ নেই।’

জসিম ট্রেডার্স ভৈরবের প্রতিষ্ঠিত ধান চালের আড়তদার প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আল আমিন। ধানের দাম কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত লকডাউনের প্রভাব আছে। কারণ, এখন কোনো কিছুই স্বাভাবিক নেই। দূরের ক্রেতারা সহজে আসতে পারছেন না। আবার দর ভালো না পেলেও কৃষকেরা কিন্তু ধান কাটা থেকে বিরত নেই। কারণ, পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। ফলে আমদানির বিপরীতে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় দাম কমছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/ডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়