News Bangladesh

স্টাফ রিপোর্টার || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:১০, ৮ এপ্রিল ২০২১

এবিএম মূসার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার

এবিএম মূসার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার

প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলাম লেখক এবিএম মূসার ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল শুক্রবার। ২০১৪ সালের এদিনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৩ বৎসর বয়সে তার মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালের ২৯ শে মার্চ তাকে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল অবস্থার অবনতি হলে ৭ এপ্রিল দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে তাকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেয়া হতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর একটা ১৫ মিনিটে এবিএম মূসার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা খুলে ফেলা হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ক্লাবের আজীবন সদস্য এবিএম মূসা ১৯৩১ সালে তার নানার বাড়ি ফেনী জেলার ধর্মপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি দীর্ঘ ৬৪ বছর ধরে সাংবাদিকতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফ থেকে তার সাংবাদিকতার জীবন শুরু হয়। ঐ বছরে তিনি ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন।
একাত্তর সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্থান অবজারভারে রিপোর্টার, স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালিন পাকিস্তান সরকার পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ করে দিলে তিনি সংবাদে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি অবজারভারে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তিনি বিবিসি, সানডে টাইমস প্রভৃতি পত্রিকার সংবাদদাতা হিসাবে রণাঙ্গন থেকে সংবাদ প্রেরণ করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি বিটিভির মহাব্যবস্থাপক, মর্নিং নিউজের সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে এবিএম মূসা ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের (এসকাপ) এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ দেন। দেশে ফিরে এসে ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদক ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি কিছুদিন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
এবিএম মূসা জাতীয় প্রেস ক্লাবের চারবার সভাপতি এবং তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এবিএম মূসা একুশে পদকসহ দেশী বিদেশী নানা পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন। ‘মুজিব ভাই’ তার অন্যতম প্রকাশিত গ্রন্থ।
সরকারের নিমোর্হ সমালোচনায় তিনি ছিলেন নির্ভীক ও সোচ্চার। তার লেখনী ছিল ক্ষুরধার। তিনি আমৃত্যু সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। মৃত্যুর পূর্ববর্তী বছরগুলোতে তিনি টেলিভিশন টক-শোতে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার মৃত্যু পরবতী সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয় "এবিএম মূসা ছিলেন আমাদের সাংবাদিক সমাজের জ্যেষ্ঠতম সদস্য ও অভিভাবক।"
২০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি নানাবিধ বাধর্ক্যজ্বনিত রোগে ভুগছিলেন। তার হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক, ফুসফুস প্রভৃতিতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষ ভাগে তিনি মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম আক্রান্ত হন। এর ফলে তার অস্থিমজ্জা বিনষ্টিতে আক্রান্ত হয়। এটি ক্যানসারের ন্যায় প্রাণহারী ব্যাধি। অর্ধচেতন অবস্থায় তাকেঁ ২৯ শে মার্চ ল্যাবএইড হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দেহের রক্ত উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ১১ দিনে তার দেহে ২৪ ব্যাগ রক্ত সংবাহন করা হয়েছিল।
হাসপাতাল থেকে মরদেহ বাসায় নেয়ার পর মাগরিবের নামাজের পর মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডের মাঠে এ বি এম মূসার প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে জোহরের নামাজের পর তার দ্বিতীয় জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। এর পর মরদেহ ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে ফেনী শহরে ও পরে গ্রামের বাড়ি কুতুবপুরে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অত:পর মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। সাবেক সংসদ হিসেবে সংসদ ভবনে তার জানাযা হোয়ার কথা থাকলেও তার আয়োজন করা হয় নি।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘এবিএম মূসা-সেতারা মূসা ফাউন্ডেশনে’র পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া কামনা করা হয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়