News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ৯ জুন ২০২০
আপডেট: ১২:১৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বন্ধু, আমরা তোকে ভুলবো না

বন্ধু, আমরা তোকে ভুলবো না

এসএসসির পর আমার মূল লক্ষ্য ছিল সেই সময়ে সারা দেশে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে থাকা ঢাকা কলেজে (নটরডেম কলেজও পিছিয়ে ছিল না) ভর্তি হওয়া। সেই লক্ষ্যে ঢাকায় এসে ভর্তি হলাম কোচিংয়ে। নাম ক্ল্যাসিক কোচিং সেন্টার। কয়েক দিন কোচিং করার পর সরকারী ঘোষণা এলো,এবার কলেজে ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা হবে না। এসএসসির নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। সেদিন থেকেই বন্ধ করে দিলাম কোচিংয়ে যাওয়া।

এসএসসিতে নম্বর যা পেয়েছিলাম- যে কোনো কলেজে ভর্তির আবেদনের জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু মেধাবীদের অধিকাংশই তো ঢাকা কলেজে ভর্তির আবেদন করবে। ফলে শঙ্কিত ছিলাম, ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপিঠে ভর্তি হতে পারবো কিনা! শুধু এসএসসির নম্বরের জোরেই শেষ পর্যন্ত ঢাকা কলেজে ভর্তি হতে পেরেছিলাম। সেটা ১৯৯৫ সালের কথা। মানবিক শাখায় আমার রোল নম্বর ৩৫। যতটুকু মনে পড়ে, বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য- তিন শাখা মিলিয়ে সেবার আমরা প্রায় সাড়ে ১৩শ ছাত্র ভর্তি হয়েছিলাম। এরমধ্যে অনেকেই এসএসসিতে বোর্ড স্ট্যান্ড করা। মাত্র দুবছরে বন্ধুত্ব তো দূরের কথা- সবাই সবাইকে চেনাও সম্ভব না। হোস্টেলে না থাকায় আরো সীমিত ছিল আমার চেনাজানা।

সুধাংশু কুমার সাহা, স্ত্রী মানসী সাহা ও তাদের সাত বছরের কন্যা শিশু সাঁঝবাতি

তারমধ্যেও কয়েক জন অসাধারণ বন্ধু পেয়েছিলাম। তারমধ্যে একজন বালিগাঁও হাই স্কুলে আমার সহপাঠী অলিউল্লাহ হিরো কলেজের গণ্ডি পেরোনোর দুবছরের মধ্যেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। কলেজের দুবছর নিয়মিত ক্লাশ করা ছাড়া তেমন কোনো পড়াশোনাই করিনি। শুধু আমি নই প্রায় সবারই এই দশা। কোনো একটা পরীক্ষায় (প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল, ঠিক মনে করতে পারছি না) সব মিলিয়ে ১০-১২ জন সব বিষয়ে পাস করেছিল। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের আস্থায় সবাই প্রমোশন পেয়েছিলাম। আর কি আশ্চর্য, সেই ফেলুদের মধ্যেই ৩৬ জন ১৯৯৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় একক বা যৌথভাবে বোর্ডের মেধা তালিকায় জায়গা করে নেয়। এরপর আমাদের অনেকের ঠিকানা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও একে অপরের অতি আপন হয়ে ছিলাম ঢাকা কলেজের বন্ধুরা। তারপর ক্যাম্পাসের পাঠ চুকিয়ে কর্মজীবনের ব্যস্ততা। কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার কথা, ধীরে ধীরে চেনা মুখগুলো ধূসর হয়ে যাওয়ার কথা, বন্ধু হারিয়ে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ অনুভবের কথা!

আমাদের কিন্তু তেমন কিছুই ঘটলো না। কারণ আমাদের ঢাকা কলেজের বন্ধুদের মধ্যে আছে কিছু অসাধারণ সংগঠক, আন্তরিক উদ্যোক্তা। ঢাকা কলেজ ফ্রেন্ডস ৯৭ (ডিসিএফ৯৭)- এর ব্যানারে আবার শুরু হলো আমাদের পথচলা। ২০ থেকে শ, এক শ থেকে সাড়ে তিন শ, সাড়ে তিন শ থেকে হাজারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের মিলনমেলা। আমরা এখন আবার একত্র হই। ৬ নম্বর গ্যালারির নিচ কিংবা কলেজ ক্যান্টিন বা কোনো হোস্টেলের মাঠে নয়- সেই সুযোগ আর আমাদের নেই। বন্ধুরা মিলে এখন বিরাট আয়োজনে ফ্যামিলি ডে কাটাই, এক সাথে ইফতার খাই, সময়ে-অসময়ে হোটেল-রেস্টুরেন্টে আড্ডায় বসে যাই, এর-ওর অফিসে ঘুরে বেড়াই আর দিন-রাত ফেসবুকে গ্যাজাই। আমরা আবার কৈশোর আর যৌবনের সীমান্তরেখার সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই। দুবছরের কলেজ জীবনকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস চালাই।

আমাদের এই পুনর্মিলনের পথে, কলেজ জীবনের পুনর্জাগরণের পথে এসো গেলো করোনাকাল। মহামারী কেড়ে নিল আমাদের বন্ধু সুধাংশুর জীবন। সুধাংশু কুমার সাহা, এনবিআরের উপ কর কমিশনার। ২৭তম বিসিএসের কর ক্যাডারে ওর স্থান ছিল প্রথম। আমাদের ডিসিএফ৯৭-এর একটি প্রাণ। করোনা যুদ্ধে হেরে আমাদের কাঁদিয়ে চলে গেছে গতকাল। এর আগে বুঝিনি, একজন বন্ধু হারানো কতোটা বেদনার।

ঢাকা কলেজ ৯৭ ব্যাচের বন্ধুদের কাছে সুধাংশুর স্মৃতি চির অম্লান থাকবে। বন্ধু, আমরা তোকে ভুলবো না!

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএজেড/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়