News Bangladesh

লাইফস্টাইল ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৩ মার্চ ২০২১

আখরোটের অনেক গুণ

আখরোটের অনেক গুণ

আখরোট একপ্রকার বাদাম জাতীয় ফল। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর যাতে প্রচুর আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। এই ফলটি গোলাকার এবং ভেতরে একটি বীজ থাকে। পাকা ফলের বাইরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরের শক্ত খোলসযুক্ত বীজটি পাওয়া যায়। এই খোলসের ভেতরে থাকে দুইভাগে বিভক্ত বাদাম যাতে বাদামি রঙের আবরন থাকে যা এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈলাক্ত বীজকে বাতাসের অক্সিজেন থেকে রক্ষা করে ফলে তা খাওয়ার উপযোগী থাকে।

ছোট্ট একটা ফল, কিন্তু তার গুণ অনেক। হতে পারে তার বাইরের খোলসটি খুব শক্ত। দেখে আর খেতে ইচ্ছে হয় না। কিন্তু ভালো জিনিস পেতে গেলে অনেক ধৈর্য আর পরিশ্রম লাগে। এই ফল আমাদের তাই শেখায়। শক্ত খোলা ভাঙলেই ভিতরে রয়েছে সেই বাদাম। যাকে আমরা বলি আখরোট (walnut) বা ওয়ালনাট। ইতিহাস বলছে হাজার-হাজার বছর আগে থেকে মানুষ তাদের প্রতিদিনের ডায়েটে আখরোটকে স্থান দিয়েছেন। এর জন্ম হলো ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এবং মধ্য এশিয়ায়। সেখান থেকে অবশ্য বণিকদের হাত ধরে এই বাদাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। 

জেনে নেয়া যাক স্বাস্থ্যরক্ষায় এবং চুল ও ত্বকের যত্নে কীভাবে কাজে লাগে আখরোট।  

আখরোটের পুষ্টিগুণ: 
এর মধ্যে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়াও এর মধ্যে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফাইবার এবং ক্যালোরি। দেখা গেছে এর মধ্যে আছে ৬৫% ফ্যাট আর ১৫% প্রোটিন। ৪% জলও আছে। বুদ্ধির বিকাশে আখরোটের বিশেষ ভূমিকা চিকিৎসক ও বৈজ্ঞানিকরা স্বীকার করে নিয়েছেন। অনেকেই ভাবেন এর মধ্যে প্রচুর ক্যালোরি আর এনার্জি আছে তাই এটা খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এই ধারণা ভুল। হাই ক্যালোরি বাদাম হলেও এটা খেলে ওজন বাড়ে না। 

স্বাস্থ্যরক্ষায় আখরোটের ভূমিকা: 
আখরোটের পুষ্টিগুণের বহর দেখে বুঝতেই পারছেন স্বাস্থ্যরক্ষায় এর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতেই বাদাম খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। আর আখরোট হচ্ছে এমন একটি বাদাম যা আপনার হার্ট ভালো রাখে, শরীরে এনার্জি আর প্রোটিন সবকিছুর যোগান দেয়। সুতরাং দেরি না করে এর ভূমিকা একবার দেখে নেয়া যাক।

১. হার্ট ভালো রাখে
যে কোনও রকমের কারডিও ভাস্কুলার রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পারে আখরোট। এটি নিয়মিত খেলে শরীরে ব্যাড কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে এবং আমাদের ধমনী ও শিরায় রক্ত চলাচল অনেক স্বাভাবিক হয়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকলে হার্ট ব্লকেজ হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে।

২. বুদ্ধির বিকাশে সাহায্য করে
এমনিতেই বুদ্ধির বিকাশের জন্য চিকিৎসকরা বলেন বাদাম খেতে। তাই আলাদা করে আখরোটের ভূমিকা এক্ষেত্রে বর্ণনা করার দরকার নেই। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে শুধু বুদ্ধির বিকাশ নয়, মানসিক অবসাদ এবং বয়সের সাথে সাথে মানুষ যে সব কিছু ভুলে যেতে শুরু করে সেটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৩. ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে
আখরোটের মধ্যে এমন কিছু সক্রিয় বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান আছে যা শরীরের বিভিন্ন কোষে ক্যানসারের সংক্রমণ আটকাতে পারে। ক্যানসার দেখা দিলে কোষের যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় সেটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে আখরোট। গবেষণা বলছে, কোলন আর প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে আখরোটের ভূমিকা প্রশংসনীয়।

৪. প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে
অন্যান্য বাদামের চেয়ে আখরোটে অনেক বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। এর মধ্যে আছে ভিটামিন ই, মেলাটোনিন এবং উদ্ভিজ উপাদান যেমন পলিফেনল আছে। এগুলো একত্রে সামগ্রিকভাবে শরীর স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
আগেই বলেছি, হাই ক্যালোরি বাদাম হওয়া সত্ত্বেও আখরোট খেলে ওজন বাড়ে না। কারণ আমাদের শরীর আখরোট থেকে ২১% এর বেশি এনার্জি গ্রহণ করতে পারে না। আখরোট অল্প খেলেই পেট ভরে যায় তাই এটি আপনার খিদেও নিয়ন্ত্রণে রাখবে। অল্প পরিমাণে এই বাদাম খেলেই আপনি যথেষ্ট পরিমাণে এনার্জি পাবেন তাই অন্য খাবারের প্রয়োজন হবে না।

৬. ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি
আখরোটে যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে তার নাম হলো আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড। এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং উপকারি ফ্যাট যা আপনার শরীরকে সুস্থ সবল রাখে। এই অ্যাসিড হার্টের জন্যও ভাল।

৭. ইনফ্লেমেশান কম করে
হার্টের অসুখ, টাইপ ২ ডায়বেটিস, ক্যানসার এমনকি অ্যালঝাইমার পর্যন্ত সব রোগের উৎস হলো এই ইনফ্লেমেশান। ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেড়ে গেলে এটা হয়। আখরোটে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যামাইনো অ্যাসিড এটি নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৮. অন্ত্রের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে
আমাদের অন্ত্রে কিছু উপকারী জীবাণু বাস করে। যারা নানা কাজে আমাদের শরীরকে সাহায্য করে। আখরোট এই উপকারী মাইক্রোব বা জীবাণুদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং এদের সংখ্যা কমে যেতে দেয় না। যাতে শরীরের কোনও ক্ষতি না হয়।

৯. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
যারা নিজেদের ওজন নিয়ে ভীষণ সচেতন থাকেন এবং বিভিন্ন রকম ডায়েট নিয়ে পড়াশোনা করেন, তারা জানেন ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে, হার্ট ভালো রাখতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুষ্টিবিদরা অনেক সময় ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট বা মেডিটেরানিয়ান ডায়েটের পরামর্শ দেন। আসলে এই ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে আখরোট থাকে। গবেষণা বলছে যে এটি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অনেকটা কম করে।

১০. টাইপ ২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
যেহেতু অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে ব্লাড সুগার এবং ডায়বেটিস জড়িত আছে, সেহেতু ওজন কম হলে এগুলোও কমে যায়। আগেই বলেছি আখরোট আপনার ওজন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে। আখরোট নিয়মিত খেলে টাইপ ২ ডায়বেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন যাদের ডায়বেটিস আছে তারা টানা তিন মাস নিজেদের খাবারে ওয়ালনাট অয়েল বা আখরোটের তেল ব্যবহার করলে টাইপ ২ ডায়বেটিস কমে যাবে।

ত্বকের যত্নে আখরোটের ভূমিকা;
যে পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন আর খনিজ আখরোটে আছে, তা কিন্তু বেশিরভাগ বাদামেই নেই। তাই ত্বকের যত্নে অন্যান্য বাদামের চেয়ে আখরোট অনেক বেশি কাজ দেয়। এবার আমরা দেখে নেব ত্বকের যত্নে আখরোটের গুরুত্ব ঠিক কতখানি।

১. ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে
আখরোটে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি। ভিটামিন বি আমাদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মুড সুইং ঠিক করতে সাহায্য করে। স্ট্রেস কমলে ত্বকে এমনিতেই লাবণ্য আসবে। ভিটামিন বি, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট একযোগে কাজ করে ত্বকের উপর এবং স্ট্রেস কমিয়ে বলিরেখা পড়া রোধ করে।

২. ত্বকে আর্দ্রতা যোগায়
যাঁদের ত্বক শুষ্ক তাঁরা নিয়মিত আখরোট খেতে পারেন। খেতে না চাইলে আখরোটের তেল হাল্কা গরম করে রোজ রাত্রে শোয়ার আগে ত্বকে লাগান। আখরোট আপনার ত্বক ভিতর থেকে আর্দ্র রাখবে। ত্বকে কোনও সমস্যাও হতে দেবে না।

৩. ডার্ক সার্কেল দূর করে
চোখের নীচে অতিরিক্ত স্ট্রেস, কাজের চাপ বা অন্যান্য কারণে দেখা দেয় ডার্ক সার্কেল। আখরোট কিন্তু পারে ডার্ক সার্কেল কম করতে। রাত্রে শোয়ার আগে চোখের নীচে অল্প করে উষ্ণ আখরোটের তেল লাগান। টানা কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করার পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। এই তেল শুধু ডার্ক সার্কেল নয় চোখের ফোলাভাবও দূর করে।

৪. ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আনে
এর জন্য আপনাকে সামান্য একটু পরিশ্রম করতে হবে। আখরোট পেস্ট করে তার মধ্যে ওটমিল পেস্ট করে দিন, আর তার সঙ্গে মেশান এক চা চামচ মধু, এক চা চামচ তাজা ক্রিম আর চার ড্রপ অলিভ অয়েল। আপনার বাড়িতে তৈরি ওয়ালনাট প্যাক রেডি। সপ্তাহে একবার করে টানা তিন থেকে চার মাস ব্যবহার করলে দেখবেন ত্বক সোনার মতো ঝলমল করছে।

চুলের যত্নে আখরোটের ভূমিকা 
আজকের দিনে আমরা প্রত্যেকেই চুল নিয়ে সমস্যায় ভুগি। দূষণ আমাদের চুল একদম নষ্ট করে দিচ্ছে। চুল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তার ঔজ্জ্বল্য। এরকম অবস্থায় আপনার উচিত রোজকার ডায়েটে আখরোট যোগ করা। কারণ আপনার চুলকে বাঁচাতে পারবে একমাত্র আখরোট।

১. চুল লম্বা ও মজবুত রাখে
আখরোটে আছে পটাশিয়াম, ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্স ও ওমেগা নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড। এই সব উপাদান হেয়ার ফলিকলকে মজবুত করে। চুল হয়ে ওঠে লম্বা, উজ্জ্বল, মজবুত। এর জন্য আপনাকে সপ্তাহে দুইবার আখরোটের তেল দিয়ে মাসাজ করতে হবে।

২. টাক পড়তে দেয়না
দীর্ঘদিন ধরে যদি চুল উঠে যায় বা চুল পড়ে যায় তাহলে আপনার মাথায় টাক পড়তে পারে। আর এটা একদমই কাম্য নয়। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন আখরোটের তেল মাসাজ করুন মাথায়। দেখবেন আপনার এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়েছে।

৩. খুসকি প্রতিরোধ করে
আখরোট একটি প্রাকৃতিক এজেন্ট যা খুসকি রোধ করতে সক্ষম। এই তেল স্ক্যাল্প ও চুলে আর্দ্রতা যোগায়। অলে শুষ্ক কোষ জন্মাতে পারে না। আর এই কারণেই খুসকিও হয়না।

৪. স্ক্যাল্পের যত্নে
নিয়ম করে মাথায় এই তেল ম্যাসাজ করলে আপনার স্ক্যাল্প ভালো থাকবে। এই তেল আপনার স্ক্যাল্পকে আর্দ্র রাখে। আখরোটে যে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান আছে তা স্ক্যাল্পে কোনও সংক্রমণ ঘটায় না। এছাড়া এটি আপনার স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখে। আর স্ক্যাল্প যদি যত্নে থাকে তাহলে চুলও ভাল থাকবে। এছাড়া এই তেল চুলের রং ধরে রাখে। যারা চুলে রং করেন তাঁরা যদি এই তেল  ব্যবহার করেন তাহলে তাঁদের হাইলাইট আরও সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। 

নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়