News Bangladesh

লাইফস্টাইল ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১৫, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
আপডেট: ১০:১৭, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

মানসিক চাপ কমাতে ১০ কার্যকরী উপায়

মানসিক চাপ কমাতে ১০ কার্যকরী উপায়

ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নানা কারণে আমাদের জীবনে মানসিক চাপে এসে জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। সেই চাপ মাত্রাতিরিক্ত হলে জীবন নাশের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তাছাড়া মানসিক চাপের কারণে নানা রকম জটিল রোগ বাসা বাধে শরীরে। এসব মানকি চাপ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে বিশেজ্ঞরা ১০টি কার্যকরী উপায়ের কথা বলেন। নিচে এ ১০টি উপায় নিয়ে থাকছে বিস্তারিত আলোচনা -

১. ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা
আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে আমরা নির্দিধায় নিজের মনের সকল কথা বলতে পারি। ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের দিক থেকে আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যার কথা সৃষ্টিকর্তাকে জানানোর মাধ্যমে নিজের ভেতর প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারি। যে সমস্যা গুলোর জন্য মানসিক চাপ অনুভব হচ্ছে, প্রার্থনার মাধ্যমে সেগুলো থেকে মুক্তির দোয়া করতে পারি। নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত ও তাকদিরের উপর বিশ্বাস রাখা মুমিনকে অবশ্যই আল্লাহ সকল মানসিক শান্তি প্রদান করবেন। ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বী যারা আছেন তারা নিজ নিজ ধর্মের নিয়ম মেনে পার্থনা ও ধর্ম চর্চা করবেন।

২. কিছুক্ষনের জন্য ব্রেক নিন, হাটতে বেড়িয়ে পড়া
অতিরিক্ত কাজের চাপে যখন অবসাদ চলে আসে, মানসিক চাপ অনুভব হয় তখন কিছু সময়ের জন্য সকল কিছু থেকে ব্রেক নিন, এক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। Today.com এর তথ্য মতে, ড. মনিক টেলো বলেন – “যদি খুব বেশি চাপ অনুভব করেন তবে প্রকৃতির কাছে চলে যান।” তিনি আরো বলেন, দ্রুত হাঁটা কিংবা একটু বাইরে যাওয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহন করা দ্রুত চাপ কমাতে সক্ষম।

৩. রিলাক্সিং ব্রেথ “4-7-8” মেথড অনুসরণ করুন
৪-৭-৮ মেথড কিংবা রিলাক্সিং ব্রেথ পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত ঘুমানো ও মানসিক চাপ থেকে অল্প সময়ের মধ্যে মুক্তি পাওয়া যায়। ড. অ্যান্ড্রু ওলসন ২০১২ সালে তার বই “দ্য ওয়ান-মিনিট মেড”-এ এই পদ্ধতিটি প্রকাশ করেন।

কিভাবে করবেন?
আরামদায়ক অবস্থান নিন। পিঠ সোজা করে চেয়ারে বসুন বা বিছানায় শুয়ে পড়ুন। এবার আপনার জিভের ডগা উপরের ঠোঁটের ঠিক পিছনে রাখুন। আপনার নাক দিয়ে ৪ সেকেন্ডের জন্য গভীর শ্বাস নিন। তারপর ৭ সেকেন্ডের জন্য আপনার শ্বাস ধরে রাখুন। আপনার মুখ দিয়ে ৮ সেকেন্ডের জন্য ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এই চক্রটি চারবার পুনরাবৃত্তি করুন।

৪. পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটান
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রাণীদের সাথে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে হিউম্যান বডিতে কর্টিসোল নামক হরমোন নিৎসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। পোষাপ্রাণীর মধ্যে কুকুর ও বিড়ালের সঙ্গে থাকলে মানুষের একাকিত্ব ও অবসাদ কমে বলে ধারণা করা হয়। এক্ষেত্রে যদি আপনার নিজস্ব পোষাপ্রানী হয় তবে খুব ভালো তবে যদি না থাকে তবে আশেপাশের প্রাণীদের সাথে সময় কাটান, তাদের খাওয়ানোর মাধ্যমে মানসিক চাপ কমবে।

৫. ডিজিটাল ডিভাইস থেকে বিরতি নিন
আধুনিক সময়ে ডিজিটাল ডিভাইসে হারিয়ে যাওয়াও ডিপ্রেশনের অন্যতম কারণ। সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ ও ভয়াবহ এলগরিদমের কারণে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। যার ফলে নিজের কাজের প্রতি মননিবেশ নষ্ট হয় আর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। লেখক ক্রিস্টিন কার্লসনের “ডোন্ট সোয়েট দ্য স্মল স্টাফ” বইয়ে এই বিষয়ে জানিয়েছেন, তার মতে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপডেট জানার জন্য ক্রমাগত ফোন চেক করা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। তাই তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনের বাইরে ডিজিটাল ডিভাইজ Avoid করুন আর নিজেকে সময় দিন।

৬. প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ করুন
মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটানো খুব কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা, বন্ধুত্ব ও পারিবারিক বন্ধন মানসিক চাপ কমায়। বিশ্বস্ত বন্ধু কিংবা আপন মানুষের সাথে সমস্যার কথা খুলে বললে ধিরে ধিরে মাথা থেকে চাপ কমে আসে, নিজেকে খুব হাল্কা অনুভুব করতে পারবেন। তাই আপনার প্রিয় মানুষদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরুন, তাদের শরণাপন্ন হোন।

৭. ভ্রমণে বের হওয়া
মানসিক চাপ কমানোর আরেকটি ভীষণ কার্যকরী উপায় হলো ভ্রমণ করা। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমাদের মনে সতেজ থাকে, নতুন নতুন মানুষ বিষয় ও মানুষের সাথে পরিচিত হলে আমরা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারি।
যারা ভ্রমণ পিপাসু মানুষ আছেন তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা থেকে মুক্ত। তাই আপনিও যদি মানসিক চাপ কমাতে চান তাহলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা, সাংসারিক কাজের মাঝেও কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য সময় বের করুন। যতটা সম্ভব প্রকৃতির কাছকাছি ঘুরতে যান।

৮. যোগব্যায়াম করুন
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষার জন্য খুব প্রাচীন ও সর্বস্বীকৃত উপায় হলো ইয়োগা বা যোগব্যায়াম। কয়েক ধরনের যোগব্যায়াম রয়েছে। এগুলোর ভূমিকা ভিন্ন হলে তারা একত্রে আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক রাখতে প্রানায়াম, দুশ্চিন্তা দূর করতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে মেডিটেশন, শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উত্তরাসন (Standing Forward Pose) করতে পারেন। যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উত্তম সময় হলো সূর্যাস্তের সময়। এছাড়াও বিকালে বা সন্ধ্যায়ও এটি করা যেতে পারে।

৯. চুইংগাম চিবানো
আপনি কাজের মধ্যে নানানভাবে অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছেন? মাথায় বিভিন্ন দুশ্চিন্তা ভর করে? এই সমস্যা এড়ানোর একটা উপায় হলো চুইংগাম চিবানো। চুইংগাম চিবানোর সময় আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। ফলে কাজে অধিকতর মনোযোগ দেওয়া যায়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বেশ কার্যকর। কারণ এর ফলে কোনো বিষয় সহজেই আমাদের ব্রেইনের শর্ট-টার্ম মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়।

১০. পছন্দের কাজ গুলো করুন
ব্যক্তিভেদে ছোট বড় এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো করলে ভেতর থেকে ভালোলাগা কাজ করে। এটা হতে পারে গান শোনা, বই পড়া, খেলাধুলা করা, মুভি দেখা, ঘুড়তে যাওয়া। যখন এই কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই একটা ভালোলাগা কাজ করবে। তাই মানসিক চাপ অনুভব করলেই তাৎক্ষনিক ব্রেক নিন, এবং পছন্দের কাজ শুরু করুন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়