সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে: গবেষণা
কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ বছরে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্সের।
ডব্লিউএইচওর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মারিয়া নাইরা স্থানীয় সময় সোমবার জানান, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কর্মস্থলে কাজ করলে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ তথ্য জানানোর মাধ্যমে আমরা কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই।’
এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগ ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কর্মস্থলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করার কারণে তারা এসব রোগে আক্রান্ত হন। দীর্ঘ সময় কর্মস্থলে কাজ করা ও মৃত্যু নিয়ে বিশ্বে প্রথম এ ধরনের গবেষণা হলো। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২০০০ সালের তুলনায় মৃত্যুর এ হার ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
ডব্লিউএইচও ও আইএলও পরিচালিত গবেষণা বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে কর্মস্থলে কাজ করার কারণে ৭২ শতাংশ মধ্যবয়সী বা বয়স্ক পুরুষ এ ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছেন। দীর্ঘ সময় কাজের ক্ষতিকর প্রভাব ১০ বছর পরও পড়তে পারে।
গবেষণায় দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ডব্লিউএইচও বলছে, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার জনগণের মধ্যে এ ঝুঁকি বেশি।
গবেষণায় ১৯৪টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণা বলছে, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়। আর সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে ১৭ শতাংশ।
২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গবেষণা পরিচালিত হয়। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারিতে পরিস্থিতি কেমন হয়েছে, তা অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি এ গবেষণায়। তবে ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে এ ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
ডব্লিউএইচও বলছে, মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মঘণ্টা আরও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেবে। সংস্থাটি বলছে, কমপক্ষে ৯ শতাংশ মানুষ কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসসহ সংস্থার কর্মীরা বলেছেন, মহামারির সময় তারা দীর্ঘ সময় কর্মস্থলে কাজ করেছেন। ডব্লিউএইচওর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মারিয়া নাইরা বলেন, ডব্লিউএইচও এ গবেষণার আলোকে তাদের নীতি উন্নয়নের পরিকল্পনা করছেন।
ডব্লিউএইচওর প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা ফ্রাঙ্ক পেগা বলেন, কাজের সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ কর্মীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কর্মঘণ্টা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে নির্দিষ্ট ওই সময়ের মধ্যে কর্মীদের কর্মক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএস