রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে আইনি জটিলতা কতোটা
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে করা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি উঠেছে। ইতিমধ্যে এই দাবিতে জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ কয়েকশ মানুষ। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিশ্চিত করতে দু'দিনে সময় চেয়ে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো জটিলতা তৈরি হবে কিনা? সংসদ কার্যকরী না থাকায় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের জন্য সংসদের দুই তৃতীয়াংশের সই ও ভোট কিভাবে সম্ভব? অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সংবিধান অনুযায়ী স্পিকারের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার যে আইন তা কিভাবে বাস্তবায়িত হবে? এখন স্পিকার না থাকায় রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে স্পিকারের দায়িত্ব পালনের বিষয়টির প্রশ্নও থাকছে। এসব প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ সকল মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নিউজবাংলাদেশকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি গোপনীয়তার শপথ রক্ষা করতে পারেননি। পরে বঙ্গভবন থেকে বলা হয়েছে মীমাংসিত বিষয়। তার মানে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। তারপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আইন দিয়ে সব সময় সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় না। তিনি চাইলে পদত্যাগ করতে পারেন। কোনো বাধা নেই।
এ সমস্যা সমাধানে কেউ কেউ মত দিচ্ছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়েছিল এ ক্ষেত্রেও তেমনটি করা যেতে পারে। অর্থাৎ সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়া।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের পরও কিছুটা আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। কেন না, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধিতে সংবিধানের ৪৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন।
সংসদ না থাকায় সংসদ সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
তবে রাষ্ট্রপতি চাইলে তার পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে রেখেও চলে যেতে পারেন বলে মনে করেন কোনো কোনো আইজ্ঞ।
রাষ্ট্রপতির অভিসংশন নিয়ে সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:
(১) এই সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যাইতে পারবে; এর জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অনুরূপ অভিযোগের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে দিতে হবে; স্পিকারের কাছে নোটিশ দেওয়ার দিন হতে ১৪ দিনের পূর্বে বা ৩০ দিনের পর এই প্রস্তাব আলোচিত হইতে পারবে না; এবং সংসদ অধিবেশনরত না থাকলে স্পিকার অবিলম্বে সংসদ আহ্বান করবেন।
এছাড়া শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তার পদ হতে অপসারণ করা নিয়েও সংবিধানে আইন রয়েছে। সেখানে ৫৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তাহার পদ হতে অপসারিত করা যাইতে পারবে; ইহার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে দিতে হবে।
তবে বিষয় হলো- রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে এসব আইন দেশের স্বাভাবিক অবস্থায় প্রয়োগ হবার কথা থাকলেও স্বাভাবিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ছাত্র-জনতা আন্দোলন হয়নি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি। সুতরাং রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হবে এমনটি ভাবা যুক্তিযুক্ত নয়। সে অনুসারে, রাষ্ট্রপতি কার কাছে পদত্যাগ করবেন সেটি বড় বিষয় নয়।
এ বিষয়ে আইনজীবীরা বলছেন- রাষ্ট্রপতি যদি করেন তিনি নিজ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। এ মুহূর্তে কাউকে অ্যাড্রেস করে পদত্যাগ করার বিষয় নেই। দেশের সামাগ্রিক প্রয়োজনে সময় বিবেচনায় স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিকল্প পথেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। যখন প্রধানমন্ত্রী নেই, সংসদ নেই তখন এই সরকার গঠিত হয়েছে। এখন সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে উপদেশমূলক পরামর্শ চাইতে পারে। এখন আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কোনো সুযোগ নেই। কারণ এখন সংসদ নেই। তবে যে কোনো সময় রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই বলে জানান তারা।
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি