খালেদাকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগপত্র দাখিল করে গোয়েন্দা পুলিশ খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করবে। পরোয়ানা হাতে নিয়েই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবি পুলিশের এক পদস্থ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীর রমনা ও যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় পৃথক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার হুকুমদাতা হিসেবে গ্রেফতার হতে পারেন খালেদা জিয়া। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও অভিযোগপত্র দাখিলের পরই মূলত তাকে গ্রেফতারের আইনী প্রক্রিয়া শুরু হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর রমনা ও যাত্রাবাড়ী থানায় গ্রেফতারদের ইতোমধ্যে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছে আদালত। তাদের জবানবন্দিতে খালেদা জিয়ার নাম উঠে এসেছে। জবানবন্দিতে টিপু নামের এক আসামির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বিএনপির মহানগর সেক্রেটারি সোহেল ভাই বলেছেন, ম্যাডামের নির্দেশ আছে পুলিশের উপর এ্যাটাক করে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দিতে হবে।’
প্রসঙ্গত গত ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর রমনা পার্কের গেটে পুলিশের একটি বাস লক্ষ্য করে ককটেল ও পেট্রোলবোমা হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকসহ ১৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতদের মধ্যে শামীম নামের এক কনস্টেবল গত ৫ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে পিজি হাসপাতাল ও বারডেম হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে নিজস্ব বাসে পুলিশ সদস্যরা রাজারবাগের পুলিশ লাইনে ফিরছিলেন। বাসটি রমনা পার্কের রমনা রেস্টুরেন্টের গেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ বাস লক্ষ্য করে একাধিক ককটেল ও পেট্রোলবোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রমনা থানায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ারসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলা নম্বর ২২ (১৮.১.১৫)।
ডিবি সূত্র জানায়, রমনা পার্কের গেটে পুলিশের একটি বাস লক্ষ্য করে ককটেল ও পেট্রোলবোমা হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত চার জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের মধ্যে রফিক ও আলফাজ নামের দুই ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল হকের ২৪ নম্বর কোর্টে রফিক আকন্দ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে রফিক বলেছেন, “আমি গাউছিয়া মার্কেটে ফুটপাতে জুতা বিক্রি করি। আমি বিএনপির রাজনীতি করি। ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ বিকালে আমাকে ছত্তার ফোন দিয়ে আব্বাসকে নিয়ে শাহবাগে যেতে বলে। সেখানে টিপু ভাই, হোসেন ভাই আসার কথা। আমি আব্বাস একটি রিকশা করে শাহবাগে যাই। সেখানে পূবালী ব্যাংকের নিচে ছত্তারের সাথে দেখা হয়। এরপরে মাগরিবের পরপর বারডেমের ভেতরে গিয়ে আমরা তিনজন হোসেনের সঙ্গে দেখা করি। এরপর আমরা শিশুপার্কের সামনের রাস্তা দিয়ে রমনা পার্কের ভেতরে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ পর ছত্তার ফোন দিলে একটি মোটরসাইকেলে করে টিপু এবং শাহ আলম আসে। টিপুর হাতে এ সময় একটি হাতব্যাগ ছিল। কিছু পরে সেখানে জনি আসে। এর পরে আমার সামনে টিপু ছত্তার কিছুক্ষণ কথা বলে। টিপু ছত্তারকে জানায়, টিপুর সাথে মহানগর সেক্রেটারি সোহেলের (হাবিব উন নবী খান সোহেল) কথা হয়েছে এবং সোহেল ভাই বলেছেন, ম্যাডামের নির্দেশ আছে পুলিশের উপর এ্যাটাক করে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দিতে হবে। আমরা প্রায় ১ ঘণ্টা পর রেস্টুরেন্ট থেকে বের হই। এরপরে টিপু তার ব্যাগ থেকে ১টি বোমা বের করে আমার হাতে দেয় পুলিশের গাড়িতে মারার জন্য। এ সময় টিপু আমাকে ১ হাজার টাকা সাধে। আমি টাকা নেইনি। টিপু নিজের হাতে একটি বোমা নেয়। শাহ আলম মোটরসাইকেল নিয়ে সামনে যায়। ছত্তার ও আব্বাস আইল্যান্ডের উপর গিয়ে দাঁড়ায়। কথা থাকে ছত্তার আব্বাস পুলিশের গাড়ি আসার সিগনাল দিলে আমরা বোমা মারব। টিপু আমাকে বলে দিল, সে বোমা মারার পরে আমি বোমা মারব। আমি হোসেন, জনি, টিপু সামনে এগোই। এ সময় ছত্তার আব্বাস ইশারা করলে টিপু পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে বোমা মারে। এরপর মোটরসাইকেল করে শাহ আলম, জনি টিপু কাকরাইল দিয়ে চলে যায়। আমি, আব্বাস, ছত্তার, হাইকোর্টের সামনে দিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে আসি। হোসেন মৎস্য ভবন থেকে বাসে উঠে শনির আখড়ার দিকে যায়। ঢাকা মেডিকেলের সামনে আসার পরে ছত্তারকে টিপু ফোন করে জানায়, ওরা নাকি একটুর জন্য ধরা খায়নি। এরপরে বাসায় যায়। বাসায় এসে টিভিতে পুলিশের গাড়িতে বোমা মারার খবর দেখি। ছত্তার এ সময় আমাকে ফোন দিয়ে টিভির খবরের বিষয়টি নিয়ে কথা বলে।”
ডিবি সূত্র জানায়, আসামিদের জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য অনুসারে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করছে ডিবি পুলিশ। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাকে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে। অভিযোগ শুনানির জন্য আসামিকে (খালেদা জিয়া) আদালতে হাজির করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করবে। হঠাৎ করেই রমনা থানার পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী থানায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলাটির তদন্তও শেষের পথে বলে জানা গেছে। যে কোনো সময় মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখানো হবে। পরে তার বিরদ্ধে পরোয়ানা জারি করে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, যে কোনো ঘটনায় জড়িতদের জবানবন্দির তথ্য নিয়ে তদন্ত শেষ করা হয়। তবে তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে অভিযোগপত্র দাখিলের আগেও আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেন। আবার অভিযোগ শুনানির সময় হাজির রাখার জন্য আদালতের আদেশ নিয়েও আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সবকিছু নির্ভর করছে মামলার তদন্ত, অভিযোগ ও আদালতের নির্দেশের ওপর।
এলআর/
নিউজবাংলাদেশ.কম