News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২২ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ২৩:৫৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

বাজারদর পতন, পশ্চিমবঙ্গে ৮ আলুচাষীর আত্মহত্যা

বাজারদর পতন, পশ্চিমবঙ্গে ৮ আলুচাষীর আত্মহত্যা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আলু চাষ করে ভয়ানক লোকসানের কবলে পড়েছেন চাষীরা। আলুর দর না পেয়ে ঋণভারে জর্জরিত আলুচাষীরা অনেকেই হতাশ। ইতোমধ্যে নিরুপায় হয়ে আলুচাষীদের আটজন আত্মহত্যা করেছেন।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ‘রাজ্য সরকার যতই ন্যায্যমূল্যে আলু কেনার আশ্বাস দিক, চাষীদের আত্মহত্যা তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। সর্বশেষ বর্ধমানে দুই চাষী আত্মঘাতী হয়েছেন।’

শুক্রবার কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন ওই দুই আলুচাষী। কারণ হিসেবে আলুর দর না পাওয়াকেই দায়ী করছেন তাদের বাড়ির লোকজন।

আলুর দর না পেয়ে পশ্চিমবঙ্গে এই নিয়ে অন্তত আট জন চাষী আত্মহত্যা করলেন।
উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে আলুর দর চেয়ে যথারীতি চলছে বিক্ষোভ-অবরোধও।

আত্মহত্যাকারী দুই চাষীর এক জনের বাড়ি জামালপুরে, অন্যজন কালনার বাসিন্দা। দু’জনই ঋণ নিয়ে পাঁচ বিঘা করে জমিতে আলুচাষ করেছিলেন। কিন্তু ‘নাবিধসা’ রোগে ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ জন্য রোগের হাত থেকে বাচাঁতে মোটা টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু বাজারে দর কমে যাওয়ায় কীটনাশকের দাম মেলেনি। ফলে শোধ করা যায়নি ঋণ। ওই দুই চাষী শুক্রবার কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

জামালপুরের বিষ্ণুবাটি গ্রামের চাষী প্রসাদ ওরফে অতুল লেট (৪০)। শুক্রবার সকালে চাষের জমির পাশে তাকে পড়ে থাকতে দেখে স্বজনরা তাকে চকডিহি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে জামালপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং পরে দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে মারা যান তিনি।

স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির ম্যানেজার গৌরাঙ্গ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ২০১০ সালে পার্বতীও আমাদের সমবায় থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিছু টাকা শোধ হলেও ৬০ হাজার টাকা বাকি।’

জামালপুর থানা অবশ্য দাবি করেছে, পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই ঘটনা। জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিকের বক্তব্য, ‘ওই ব্যক্তি তো আগে শাড়ি ফেরি করতেন। জামালপুরে এবার আলুর ফলন ভাল হয়েছে। চাষে লোকসানের জন্য আত্মহত্যার সম্ভাবনা খুব কম।’

শুক্রবার রাতে কালনা ২ ব্লকের বড়ধামাস পঞ্চায়েতের শিবরামপুর গ্রামেও বিজয় হাঁসদা (৩৮) নামে এক আলুচাষীর মৃত্যু হয়। তার ভাই সঞ্জয় হাঁসদার দাবি, ‘গতবার আলুতে ভাল লাভ হওয়ায় এবার অনেক মহাজন চাষের জন্য টাকা ধার দিয়েছিলেন। আলু ওঠার পরে পাওনাদাররা বাড়িতে এসে তাগাদা দিচ্ছিল।’

গ্রামবাসী জানান, এবার এলাকায় নাবিধসা রোগে আলুক্ষেতের বড় ক্ষতি হয়েছে। যাও বা বেঁচেছিল, শেষ দিকে বস্তা পিছু ১০০ টাকাও পাওয়া যায়নি।

কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, সংশ্লিষ্ট বিডিও-কে এ সম্পর্কে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’

ন্যায্যমূল্যে আলু কেনা ও চাষীদের ঋণ মওকুফের দাবিতে এদিন বীরভূমের মল্লারপুরে বাহিনা মোড়ে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘণ্টাখানেক অবরোধ করা হয়। চাষীরা জানান, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করে তারা বিপাকে পড়েছেন। পরে বিডিও-র আশ্বাসে অবরোধ উঠিয়ে নেন চাষীরা।

জলপাইগুড়ি জেলায় ইতোমধ্যে সাড়ে ৫ টাকা সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হয়েছে। তার বদলে ১০ টাকা কেজি দরে আলু কেনার দাবিতে ধূপগুড়িতে বেলা ১১টা থেকে টানা এক ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে এসইউসি। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়।

চাষীদের বক্তব্য, খেতের সব আলু এখনও ওঠেনি। সেগুলো উঠলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। হিমঘরগুলিতে আলু মওজুদের জন্য বন্ড চাইতে গিয়ে জায়গার অভাবে ফিরে আসতে হচ্ছে। 


নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়