অবশেষে রবিবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি
ছবি: সংগৃহীত
১৫ মাস ধরে চলা ফিলিস্তিন অধ্যুষিত গাজা ভূখণ্ডে নৃশংস সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ইসরায়েল ও হামাস।
আগামী রবিবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল-থানি।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির যে চুক্তি হয়েছে তা ১৯ জানুয়ারি রবিবার থেকে কার্যকর হবে।
বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের স্থানীয় সময় রাত ১০টার কিছু আগে সাংবাদিকদের সামনে তিনি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার এ ঘোষণা দেন। ওই ব্রিফিংয়েই চুক্তি কার্যকর হওয়ার এ সময়সীমা জানান কাতারের প্রধানমন্ত্রী।
যুদ্ধ শেষ হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল–থানি বলেন, আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে। সব পক্ষ যে প্রতিশ্রুতি দিযেছে তা নিশ্চিত করার জন্য কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
এর আগে কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাস একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বন্দিদের জন্য আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি। তারা শিগগিরই মুক্তি পাবেন। ধন্যবাদ।
একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর হোয়াইট হাউজে দেয়া ভাষণে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, শিগগিরই জিম্মিরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল–থানি তার কার্যালয়ে আলাদাভাবে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এরপর যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে একমত হন দুই পক্ষ।
এদিকে যুদ্ধবিরতির খবর সামনে আসার পর গাজার বাসিন্দাদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। মধ্য গাজার দেইর আল–বালাহ ও অন্যান্য এলাকায় জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। আনন্দে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেককে মুঠোফোনে ছবি তুলতে দেখা যায়।
হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, কাতারের ঘোষণার পর ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন গাজা শহরের শেখ রাদওয়ান পাড়ার একটি আবাসিক ব্লকে বসবাস করছিলেন। তবে বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংঘাতের এই ১৫ মাসের মধ্যে শুরুর দিকে একবার মাত্র সাত দিনের যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এরপর থেকে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনা হলেও আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি চুক্তির চাপ বাড়তে থাকে। এ লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে জোর তৎপরতা শুরু করে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র। হামাস ও ইসরায়েলের সঙ্গে শুরু করে আলোচনা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
এতে ১ হাজার ২১০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করা হয় ২৪১ জনকে। তাদের মধ্যে ৯৪ জন এখনো গাজায় বন্দী রয়েছেন। হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৬ হাজার ৭০০ জনের বেশি।
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা থেকে বাদ যায়নি ২৩ লাখ বাসিন্দার এই উপত্যকার মসজিদ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, আবাসিক ভবন, এমনকি শরণার্থী শিবিরও। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
ইসরায়েলি নির্বিচার হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজাবাসী চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি