হাঁচি-কাশিতে ছড়ানো করোনা ভেসে বেড়ায় বায়ুকণায়
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের হাঁচি-কাশিতে দূষিত বায়ুকণার (পার্টিকেলস) মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। অর্থাৎ, বাতাসের কণায় ভাইরাসটি ভেসে বেড়াতে পারে, যদিও তা যৎসামান্য মাত্রায়। তবে ভাইরাসটি দূষিত বায়ুকণায় ভর করে কতটা দূরে ভেসে যেতে পারে এবং ওইরকম দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নিলে মানুষ আক্রান্ত হবে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। যদি বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে, তবে মহামারিতে আরও অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হবে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
করোনা মহামারিতে ব্যাপক প্রাণহানির শিকার হওয়া অন্যতম দেশ ইতালি। দেশটির বিজ্ঞানীরা করোনা আক্রান্ত একটি শহুরে এলাকা এবং বারগামো শিল্প এলাকা থেকে বায়ু দূষণের নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা দেখেছেন, তাতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিন উপস্থিত। তারা একাধিকবার এবং স্বতন্ত্র ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন, পার্টিকেলের সঙ্গে করোনার এক প্রকারের জিন স্পষ্ট।
গবেষকরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত মানুষ যখন হাঁচি দেন, কফ বা থুথু ফেলেন, তখন তার ভারি কণাগুলো মাটিতে এক বা দুই মিটার দূরে পতিত হয়। কিন্তু যেগুলো অতিসূক্ষ্ম বা ৫ মাইক্রোগ্রামের ছোট কণা, সেগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এই ছোট কণা বাতাসে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে। যেতে পারে দূরেও। প্রসঙ্গত, যে এলাকা থেকে দূষণকণা সংগ্রহ করা হয়েছে, ওই এলাকায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে করোনায়।
গবেষক দলের প্রধান ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিওনার্দো সেটি বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ভাইরাসটি দূষিত বাতাসের পার্টিকেলে ভর করে কতটা দূরে যেতে পারে, সেটি খতিয়ে দেখা, এছাড়া বাতাসে যে সামান্য মাত্রায় ভাইরাসটি ভেসে বেড়ায়, ওই মাত্রা মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে কিনা।”
তিনি বলেন, “আমি বিজ্ঞানী, আমার ভয় হবে তখনই, যখন আমি একটি বিষয় জানবো না। জানলে দুর্ভোগ ঠেকানো যায়।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়িয়েছিল। করোনাভাইরাসও বাতাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় কিনা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
এদিকে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রফেসর জোনাথন রেইড গবেষণা চালাচ্ছেন করোনা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে কিনা, সেটি নিয়ে। তিনিও জানিয়েছেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে করোনার জীবাণু বাতাসে ছড়াতে পারে। অতিক্ষুদ্র কণা বাতাসের পার্টিকেলে ভর করে তা ছড়াতে পারে, এটিই স্বাভাবিক। তিনি জানান, চীন থেকে সংগ্রহ করা বাতাসেও করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এফএ