গীতা ‘রাষ্ট্রীয় ধর্মগ্রন্থ’ নয়: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
গীতাকে ‘রাষ্ট্রীয় ধর্মগ্রন্থ’ ঘোষণার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের করা একটি আবেদনের শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। এ প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন, হিন্দু ধর্মের পবিত্র গ্রন্থটি নিয়ে অন্যান্য মতের লোকজনের আলাদা আলাদা বিশ্বাস রয়েছে।
আর্জি পেশকারী আইনজীবী এল কে বালকৃষ্ণকে গত শুক্রবার আদালত বলেছেন, তার আবেদন আদালতের নজরে এসেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি এইচ এল দত্ত, বিচারপতি এম ওয়াই ইকবাল ও বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, একজন ভাবতে পারেন এটা আমার জন্য পবিত্র গ্রন্থ একইভাবে অন্যকোনও গ্রন্থের ব্যাপারেও এমনি বলতে পারেন।
দেশটির শীর্ষ আদালত আরও বলেন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ প্রসঙ্গে প্রত্যেক মানুষের আলাদা আলাদা মনোভাব রয়েছে। তাহলে আমরা কীভাবে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে পারি? লোকজনের এটা বিবেচনার ক্ষমতা আছে যে তারা কী পড়তে চান।
জনগুরুত্বপূর্ণ আবেদন (পিআইএল) হিসেবে দাখিল করা এই আর্জিকে নিরুৎসাহিত করে আদালত বালকৃষ্ণকে খোদ পবিত্রগ্রন্থ গীতার বাণী “পরিণামের চিন্তা না করে মানুষ কর্ম করে” উদ্ধৃত করে শোনান। এর আগে আদালত বলেন, গীতার ওই উপদেশকে ভিত্তি করে চলচ্চিত্র ‘সন্ন্যাস’-এর একটি গান আছে। গানটি হচ্ছে, “কর্ম কিয়ে যা ফল কি ইচ্ছা মাত কার এ্যায় ইনসান/ য্যায়সা কর্ম করেগা ওয়ায়সা ফল দেগা ভগবান।”
প্রসঙ্গত, বর্তমান বিজেপি সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গীতাকে ভারতের ‘জাতীয় ধর্মগ্রন্থ’ বলে আক্যা দেন। এর বিরোধীতা করেন অনেকে। দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীদের মতে, ভারতের মতো একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে একটি ধর্মগ্রন্থ কেন জাতীয় গ্রন্থরূপে চিহ্নিত হবে? তাহলে বৌদ্ধদের ত্রিপিটক, ক্রিস্টানদের বাইবেল, মুসলমানদের কোরান, শিখদের গ্রন্থসাহেব, পার্দের জেন্দাবেস্তা প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থ কী দোষ করল?
হিন্দুত্ববাদীদের ধারণা, একমাত্র গীতাই হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ও সর্বমান্য গ্রন্থ, গীতাই প্রথম ও শেষ কথা!
দেশটির সংক্যাগুরু হিন্দুদের অনেকে মনে করছেন, হিন্দুধর্মমতে যে-সহনশীলতা, যে-ঔদার্য, বহু মত-পথ সম্পর্কে যে-শ্রদ্ধা আছে, এ ভাবনা তার পরিপন্থী। তাছাড়া সম্ভবত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ভাবনা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধীও।
নিরপেক্ষ বিশ্লেষকদের মতে, গীতা আদৌ গ্রন্থ নয়। গীতা মহাভারতের একটি অংশমাত্র। আসলে গীতা এক দর্শন। দর্শন কোনও গ্রন্থে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। দর্শন মহাজাগতিক চেতনা বিশেষ। ক্ষমতাসীনরা এই দর্শনকে কোনও গ্রন্থে বেঁধে একে ব্যবহার করতে চাইছে রাজনৈতিক স্বার্থ। সূত্র: নবভারত টাইমস, দেশ
নিউজবাংলাদেশ.কম/একে
নিউজবাংলাদেশ.কম