News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
আপডেট: ০৯:১৭, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

তিন মাসের মাথায় ক্ষমতা হারাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী

তিন মাসের মাথায় ক্ষমতা হারাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী

ফ্রান্সের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতায় আসার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হচ্ছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে। দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা ভোট পাস করেছেন ফরাসি আইনপ্রণেতারা। 

ফলে প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়েকে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার মাস তিনেকের মাথায় সরে যেতে হচ্ছে। শিগগিরই প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে বার্নিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ফ্রান্সের পার্লামেন্টের ৫৭৭ সদস্যের মধ্যে ৩৩১ জন বার্নিয়েরের সরকারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এতে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সাল থেকে কোন ফরাসি সরকারকে এ ধরনের ভোটের মাধ্যমে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়নি।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতাবলে বিতর্কিত বাজেট বিল পাস করে তোপের মুখে পড়েন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে। এমপিদের ভোট ছাড়াই বিল পাস করায় প্রধান বিরোধী দল ও বামপন্থি দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্য, ৬ হাজার কোটি ইউরো কর বাড়িয়ে এবং ব্যয় কমিয়ে ফ্রান্সের বাড়তে থাকা সরকারি ঘাটতি কমানো।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত নভেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৭ শতাংশ মানুষ এই বাজেটের বিরোধিতা করেন। তবে মিশেল বার্নিয়ে বিশেষ ক্ষমতাবলে পার্লামেন্টে এমপিদের ভোট ছাড়াই পাস করিয়ে নিয়েছেন বাজেট বিল। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। দেশটির প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল র‌্যালি, এনআর ও বামপন্থি দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

বাজেট পাস নিয়ে কিছুদিন ধরেই ফ্রান্সে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছিল। মিশেল বার্নিয়ের সরকার বেশ চাপে ছিল। জাতীয় বাজেট পাস করানো নিয়ে এ সংকট আরও জটিল হলে উগ্র ডানপন্থি ও বামপন্থি বিরোধী আইনপ্রণেতারা সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন। প্রস্তাবটি ৩৩১ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়।

এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশটি আরও গভীর সংকটের মুখে পড়লো। একই সঙ্গে দেশটির আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ও বিশাল বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতাও হুমকির মুখে পড়েছে।  

বার্নিয়াকে এখন নিজের ও সরকারের পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে জমা দিতে হবে। ফরাসি গণমাধ্যম বলছে, তিনি বৃহস্পতিবার সকালে এই কাজ করবেন। এমনটি করলে ১৯৫৮ সালে ফ্রান্সের পঞ্চম প্রজাতন্ত্র শুরুর পর থেকে তার সরকারই হবে সবচেয়ে কম বয়সী সরকার।

আইনপ্রণেতাদের অনাস্থা ভোটে হারার পর পার্লমেন্টের স্পিকার ইয়ায়েল ব্রাউন-পিভেট বলেন, বার্নিয়েরকে এখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে এবং পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে।

অনাস্থা ভোটের আগে সংসদে মিশেল বার্নিয়ে বলেন, এই (ঘাটতির) বাস্তবতা একটি অনাস্থা প্রস্তাবের জাদুর দ্বারা অদৃশ্য হবে না। বাজেট ঘাটতি যে কোনো পরবর্তী সরকারের জন্যও সমস্যার কারণ হবে।

১৯৬২ সালে জর্জ পমপিডুর সরকারের পর থেকে কোনো ফরাসি সরকার অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়নি। গত জুন মাসে ম্যাক্রোঁ আগাম নির্বাচন দিলে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট এবং বর্তমান সংকটের সূচনা হয়।

এদিকে কঠোর বামপন্থি ফ্রান্স আনবোয়েড (এলএফআই) দল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করেছে। বার্নিয়ের পতনে উগ্র-ডানপন্থি নেতা মেরিন লে পেনের দলও উল্লাসিত। দীর্ঘদিন ধরে তার ন্যাশনাল র‍্যালি দল সরকার গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিভিন্ন কৌশলে সরকার গঠনের চেষ্টায় রয়েছে দলটি।

তিনি বলেন, আমি ম্যাক্রোঁর পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছি না। প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ ধীরে ধীরে বাড়বে। কেবল তিনিই এই সিদ্ধান্ত নেবেন।

সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলে জানিয়েছে এলিসি প্রাসাদ। 

প্রসঙ্গত, গত জুন ও জুলাইয়ে ফ্রান্সে আগাম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে রাজনৈতিকভাবে বড় তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে দেশটির পার্লামেন্ট। আগাম নির্বাচনের প্রায় দুই মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর মিশেল বার্নিয়েকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়