ইসরায়েলি হামলার পঞ্চম দিনে গাজায় নিহত ১১৩, আহত ৫৮০
গত ৫ দিন ধরে ফিলিস্তিনের অন্যতম রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েলের সেনবাহিনীর মধ্যে চলা সংঘর্ষে গাজায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১১৩ জন, আহত হয়েছেন ৫৮০ জন। বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ওই অঞ্চলে শিশু ও নারীসহ নিহত হয়েছেন মোট ১১৩ জন, তাদের মধ্যে ৩১ জন শিশু ও ১১ জন নারী।
আহতদের চিকিৎসা দিতে সেখানকার হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। কারণ করোনা রোগীদের চাপ থাকার কারণে আগে থেকেই হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল নাজেহাল।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিমান হামালার পাশাপাশি স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে ইসরায়েল-গাজা সীমান্ত এলাকায় গোলা (আর্টিলারি শেল) বর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
অন্যদিকে গাজা থেকে রকেট ছোড়া অব্যাহত রেখেছে হামাস। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, তাদের বাহিনী গাজায় প্রায় এক হাজার লক্ষ্যবস্তুতে ইতিমধ্যে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে।
আল জাজিরার সংবাদে বলা হয়েছে, হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলে সাতজন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিকও আছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার লেবানন থেকে তিনটি রকেট ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রকেটগুলো ভূমধ্যসাগরে পতিত হওয়ায় তাদের কোনো ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছেন, ওই রকেটগুলো সেখানকার উপকূলীয় কেলাইলেহ অঞ্চল থেকে ছোড়া হয়েছে।
অবৈধ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে গত ৯ মে রাতে আল-আকসায় মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। সেই হামলা এখনও অব্যাহত আছে। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।
হামাসের রকেট হামলায় ইসলায়েলে এ পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত একটি জ্বালানি কোম্পানির পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই পাইপলাইনে রকেট আঘাত হানার পর আগুন ধরে যায়।
এদিকে, হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক এই সহিংসতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এই সংঘাতের বিবদমান দু’পক্ষ— ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েল সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ বিরতির আহ্বানও জানানো হয়েছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর পক্ষ থেকে।
তবে কোনো পক্ষের মধ্যেই মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার ইচ্ছা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে। সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স
নিউজবাংলাদেশ.কম/ডি