ভারতীয় ভূখন্ডকে যুক্ত করে নেপালের নতুন মানচিত্র পার্লামেন্টে পাস
নেপাল-ভারত সংঘাত আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। শনিবার ছুটির দিনে পার্লামেন্ট ডেকে নেপাল সরকার পাস করিয়েছে নতুন মানচিত্র। যে মানচিত্রে ভারতীয় তিন ভূখন্ডকে তাদের বলে দাবি করা হয়েছে। এই তিন ভূখন্ড হল লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ। ভারত অবশ্য প্রথম থেকেই নেপালের দাবিকে খারিজ করে দিয়েছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রক শনিবার নেপাল সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, কৃত্রিমভাবে এলাকা বাড়িয়ে নেওয়ার এমন দাবি ভারতের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর অভিযোগ, নেপালের এই আচরণ ‘একতরফা’ এবং ‘ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের পরিপন্থী’।
শনিবার নেপালের পার্লামেন্টে (হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ) পাস হয়েছে নয়া মানচিত্র অনুমোদনের সংবিধান সংশোধনী বিল। শাসকদল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেস এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত মদেশীয় নেপালি দলগুলিও বিলটি সমর্থন করেছে। রাজতন্ত্রের অবসানের পর নেপালি কমিউনিষ্ট পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই তিন ভূখন্ড নেপাল তাদের বলে দাবি জানিয়ে এসেছে। এমনকি নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বিতর্কিত ভূখন্ড উদ্ধারে যুদ্ধেরও হুমকি দিয়েছেন।
তবে যেভাবে নেপাল সরকার ভূখন্ডের দাবিতে একগুয়ে মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলেছে তাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তিক্ততা তীব্র হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার বিহারের সীতামারিতে নেপাল সীমান্ত পুলিশের গুলিতে ভারতীয় কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ভারত যদিও মনে করে দুই দেশের মধ্যে ভৌগলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় যোগসূত্র রয়েছে, কিন্তু নেপাল সরকারের সাম্প্রতিক মনোভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চলেছে বলে সাবেক কূটনীতিকদের অভিমত। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তথা এক সময়ে নেপালে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্যাম সারণ বলেছেন, ভারত-নেপাল সম্পর্ক দু’দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাত্র ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার জন্য যে আচরণ নেপালের বর্তমান নেতৃত্ব করছেন, তাকে ‘অদূরদর্শী’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও সারণ বলেছেন, ভারতকে খুব সতর্ক ভাবে পা ফেলতে হবে। নিজের এলাকার দখল নিজের হাতে রাখার প্রশ্নে ভারতকে অনড় থাকতে হবে।
কিন্তু নেপালিদের আবেগকে প্রশমিত করা যায়, এমন পথ খোঁজার ইচ্ছাও ভারতকে দেখাতে হবে। সম্প্রতি ভারতের উত্তরাখন্ডের ধরচুলা থেকে লিপুলেখ পাস পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক চালু হওয়ার পর থেকেই নেপাল সুর চড়িয়েছে বলে ভারতের দাবি। তিব্বত লাগোয়া পিথোরাগড় জেলার ওই তিনটি অঞ্চল সামরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বহু বছর ধরেই লিপুলেখ গিরিপথ কৈলাস ও মানস সরোবরের তীর্থযাত্রীরা ব্যবহার করেন।
নেপাল পার্লামেন্টের সদস্য জনতা সমাজবাদী পার্টির সরিতা গিরি একতরফা ভাবে মানচিত্র বদলের পরিবর্তে উত্তরাখন্ড সীমান্তের ওই তিনটি ‘বিতর্কিত’ অঞ্চল নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভারত বিরোধী আবেগ নেপালে এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, সরিতার বাড়িতেও এই প্রস্তাব দেবার জন্য আক্রমণ চালানো হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/ডি