দেশ চালাতে ইন্টারনেটের গলা টিপে ধরা ঠিক হবে না: আমিনুল হাকিম
এনশিওরিং ইন্টারনেট একসেস ফর এভরিওয়ান চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড রিফর্ম- শীর্ষক বৈঠকে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত
ইন্টারনেট সেবাকে নাগরিক মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভূক্তির দাবি জানিয়ে ‘দেশ চালানোর জন্য ইন্টারনেটের গলা টিপে ধরা ঠিক হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইআইজিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর দি ডেইলি স্টার ভবনে অনুষ্ঠিত এনশিওরিং ইন্টারনেট একসেস ফর এভরিওয়ান চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড রিফর্ম- শীর্ষক আলোচনায় এই দাবি জানান বক্তারা। গোলটেবিল বৈঠকে দেশের ইন্টারনেট খাতের করভার তথ্য তুলে ধরেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি পলিসি অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্মের (টিপাপ) সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর।
ইন্টারনেটের ওপর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শূল্ক আরোপে মনোনিবেশ না করে সুলভে নাগরিকদের কাছে পৌঁছানোর আহ্বান জানান তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা। এই আহ্বানে সাড়া না দিলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইআইজিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ওই সময় সরকার বিরোধী গণ-আন্দোলনের পরে বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, গত ৯ তারিখে নতুন কর আরোপের ঘোষণা আমাদের হতাশ করেছে। কেননা, ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। সরকার বই দিতে না পারলেও আমরা ইন্টারনেট থেকে ডাটা ডাউনলোড করতে পেরেছি। বাংলাদেশের কোনও খাতই ইন্টারনেট ছাড়া তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ধরে রাখতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে এক কোটি থেকে ৮০ লাখ। অর্থাৎ এটা খুব একটা বেশি নয়। ইন্টারনেটের দাম বাড়ালে ইন্টারনেট ব্যবহারের এই হার আরও কমবে। কেননা, আইআইজি’রা এনটিটিএন-এর মাধ্যমে আইএসপির কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়। এতে আইআইজিদের শতকরা ৩৩ টাকায় সরকারকে দিতে হচ্ছে। দেশ চালানোর জন্য ইন্টারনেটের গলা টিপে ধরা ঠিক হবে না।
বক্তব্যে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, বছরের পর বছর এই খাতের ওপরে কর আরোপ না করে মানুষের মধ্যে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখার সুযোগ করে দিতে সরকার পুরনো কর কমাবে বলে আমরা আশা করি।
বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ইন্টারনেটের দাম বাড়ালে ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, টেলিহেলথ, ডিজিটাল শিক্ষা-সহ প্রায় সব ক্ষেত্র পিছিয়ে পড়বে। আমি মনে করি, টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে সঙ্গে এমবিএনও চালু করা দরকার। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং গ্রাহকরা লাভবান হবে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার অপারেটরদের কাছ থেকে শতকরা ৭০-৮০ টাকা নিয়ে যাওয়ায় দেশে ইন্টারনেটের সেবার মান একেবারে নেমে গেছে। কর্মকর্তার কারণেই দেশে রাজস্ব বাড়ছে না। যেভাবে এসআরও জারি করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করা না হলে আমরা আগামী সোম বা মঙ্গলবার এনবিআর ঘেরাও করবো। প্রয়োজনে সচিবালয়কেও ছাড়বো না। অর্থ উপদেষ্টা কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছেন।
টেলিকম বিশেষজ্ঞ মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইন্টারনেটের উপর আরোপিত করতে ধনী-গরীব সবার ওপরেই সমান হারে পড়ছে। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থায় এটা একটা বৈষম্য সৃষ্টি করছে।
সরকার কর বাড়ানোর পরও আমাদের দাম কমাতে বলে। আমরা দামটা ঠিক কোথায় কমাবো, প্রশ্ন রাখেন রবির চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম।
আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের সাথে কোনও আলোচনা ছাড়াই এনবিআর কর বাড়িয়েছে। এতে অবৈধ আইএসপি বাড়বে। কমবে মানসম্মত সেবা। তবে এতে প্রকারান্তরে সরকারের রাজস্ব কমবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি