দূষিত ঘরের বাতাস, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি
ছবি: সংগৃহীত
এবার রাজধানীতে ঘরের ভেতরের বাতাসেও বিপজ্জনক মাত্রায় দূষণ কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর ফলে বাড়ছে বায়ুদূষণজনিত দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকি।
তাছাড়া এর প্রভাবে সৃষ্টি হচ্ছে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, কম ওজনের শিশু জন্মানো, মস্তিষ্ক বিকাশজনিত সমস্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাসযন্ত্রের রোগসহ আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিরা।
এয়ার কোয়ালিটি, ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড হেলথ (এসিএইচ) ল্যাবের প্রধান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যানড ইরফরমেট্রিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বাধীন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত ১১ অক্টোবর গবেষণার ফলাফল ‘ইনডোর এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে ‘ক্যারেক্টারাইজিং ইনডোর এয়ার কোয়ালিটি অ্যাট হোম মাইক্রো এনভায়রনমেন্ট ইন ঢাকা সিটি’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়।
গবেষণাটিতে ঢাকার ৪৩টি ঘরে পিএম-২.৫ দূষণের মাত্রা পরিমাপ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ বিশ্বের অনেক শহরের তুলনায় অনেক বেশি উদ্বেগজনক। জানালা বা ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাইরের দূষিত বাতাস ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে ঘরের বাতাসকেও দূষিত করছে। ঢাকার ঘরের ভেতরের গড় দূষণমাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ দশমিক ৬৯ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার পাঁচ গুণ। কিছু ক্ষেত্রে দূষণ মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
বাইরের বাতাসের প্রবেশের কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ বায়ুদূষণ ঘটে। রান্নার সময় দীর্ঘ সময় ধরে চুলা ব্যবহারের কারণেও ঘরের বাতাস দূষিত হয়। ঘরের আয়তন ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের বেশি হলে দূষণ মাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকে। তবে যারা নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করেন, তাদের ক্ষেত্রে দূষণ কম।
এসিএইচ ল্যাব প্রধান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ বাংলাদেশের মৃত্যুঝুঁকির চতুর্থ প্রধান কারণ। ২০১৯ সালের ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার’ প্রতিবেদনের মতে, এই কারণে প্রতিবছর ৭০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। নারীদের এবং শিশুদের জন্য ঝুঁকি বেশি, কারণ তারা দীর্ঘ সময় ঘরের ভেতরে কাটায়।
তিনি আরও বলেন, বাইরের দূষিত বাতাস ঘরে প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। রান্নার সময় উন্নতমানের পরিবেশবান্ধব চুলা ব্যবহার এবং রান্নাঘরের বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। বাইরে দূষণের মাত্রা বেশি থাকলে জানালা বন্ধ রেখে এসি ব্যবহার করতে হবে এবং নিয়মিত ঘর পরিষ্কার রাখলে দূষণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- এসিএইচ ল্যাবের রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট (আরএ) আফসানা ইয়াসমিন, ইমরান আহমেদ, মারিয়া হায়দার ও মো. কামাল হোসেন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ আব্দুল মোতালিব।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি