News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১ মে ২০২০
আপডেট: ০৩:১২, ১৭ মে ২০২০

করোনার নতুন উপসর্গ

করোনার নতুন উপসর্গ

নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগের প্রাথমিক ও প্রধান তিনটি উপসর্গের কথা বলেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: জ্বর, শুকনো কাশি আর শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন শ্বাস নেয়া। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে নতুন রূপে প্রকাশ পেয়েছে এ মহামারী ভাইরাস। ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা লক্ষণ উপসর্গ অনেক সময় চিকিৎসক-গবেষকদেরও ধন্দে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য অধিকাংশ আক্রান্তের মধ্যে কোনো ধরনের উপসর্গই প্রকাশ পায় না, এটি এখনো বহাল আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে বলা তিনটি উপসর্গের সঙ্গে নতুন আরো বেশ কয়েকটি লক্ষণ যুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্বাস্থ্য সংস্থা রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র(সিডিসি)। সিডিসির তালিকায় যুক্ত হওয়াসহ নতুন উপসর্গগুলো হলো:
ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়া
ব্রিটেনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘ্রাণশক্তি নষ্ট করতে পারে। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো কিছুর গন্ধ পাবেন না। হঠাৎ করে ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এটিকেও তারা একটি লক্ষণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। পরে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অটোল্যারিঙ্গোলজির পর্যবেক্ষণেও এমন বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নভেল করোনাভাইরাস অলফ্যাক্টরি স্নায়ুতন্ত্র বা ঘ্রাণ নিতে সহায়ক স্নায়ুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ত্বকের সমস্যা
হাতে পায়ে বুকে র‌্যাশ ওঠাও কোভিড-১৯ এর লক্ষণ হতে পারে। মূলত শিশু ও কমবয়সীদের মধ্যে এ ধরনের লক্ষণ বেশি প্রকাশ পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম দেয়া হয়েছে ‘কোভিড ফিট’। আবার ‘অ্যাকিউট অ্যাক্রোইস্কিমিয়া’ বলেও ডাকা হচ্ছে।
এই লক্ষণে হাত বা পায়ের একটা নির্দিষ্ট অংশজুড়ে ফ্রস্ট বাইটের মতো হয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় ত্বকের উপরের অংশ ও  নিচের টিস্যু শীতল ও লাল রঙ ধারণ করে। প্রথমে লালচে ফোস্কার মতো আকার নেয়। ক্রমেই সেই রং বিবর্ণ হয়ে যায়। এরপর চুলকাতে থাকে। পায়ের পাতা, হাতের তালু, হাত-পায়ের আঙুলেই এই সমস্যা বেশি হয়। গবেষকদের দাবি, হাত-পায়ের সূক্ষ্ম রক্তবাহী নালির মধ্যে আণুবীক্ষণিক রক্তের ঢেলা জমে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো সবাই একমত হতে পারেনি।
চোখে সংক্রমণ
ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ হলে যেমন চোখ লালচে হয়ে যায়, চুলকায় আবার কখনো ব্যথাও করে তেমন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণেও হতে পারে। এটি অনেকটা কনজাংটিভাইটিসের মতো। ‘দ্য জার্নাল অব দ্য আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অপথ্যালমোলজি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  আক্রান্তদের ১-৩ শতাংশের এই সমস্যা হয়।
এই উপসর্গকে বিজ্ঞানীরা ডাকছেন ‘পিঙ্ক আই’ নামে। তবে এর সঙ্গে জ্বর, গলাব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট কিছুই না থাকলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। অবশ্য করোনা উপসর্গগুলোর মধ্যে যে কোনও একটি বা দু’টি লক্ষণের সঙ্গে পিঙ্ক আই থাকলে অবহেলা করা যাবে না। সাধারণ পিঙ্ক আই দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। কারো ক্ষেত্রে আরেকটু বেশি সময় লাগতে পারে। এক্ষেত্রে জীবাণুনাশক ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাঁপুনি, শরীর ব্যথা
করোনাভাইরাসের সু্প্তাবস্থা সাধারণত ২ থেকে ১৪ দিন। অর্থাৎ এ ভাইরাস শরীরে বাসা বাঁধার এতোদিন পর লক্ষণ উপসর্গ ফুটে উঠতে শুরু করবে। সিডিসি বলছে, করোনা আক্রান্ত রোগীর কখনো দফায় দফায় কাঁপুনি হতে পারে। সেই সঙ্গে পেশী, অস্থিসন্ধি ও মাথায় যন্ত্রণা হতে পারে।
মাথা যন্ত্রণার বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া রোগ-লক্ষণের তালিকায় আগেও ছিল। কিন্তু সেখানে গবেষকদের দাবি ছিল, এই মাথা যন্ত্রণা জ্বর ও কাশির সঙ্গে আসে। তবে এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু মাথার যন্ত্রণা ও পেশীতে ব্যথাও প্রধান লক্ষণ হতে পারে।
ডায়রিয়া
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষণ তালিকায় ডায়রিয়াও রয়েছে। তবে বর্তমানে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি বেশ প্রবল দেখা যাচ্ছে। অনেকের জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্ট কমলেও ডায়েরিয়া সহজে কমছে না। এসব রোগীর মল থেকেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে বলে সতর্ক করছেন গবেষকরা।
এছাড়া সাধারণ লক্ষণের মধ্যে দুর্বলতা, ক্লান্তিভাব, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা, গলাব্যথা, অনবরত বমি হওয়া এসবও থাকতে পারে।
সূত্র: সিডিসি, মায়ো ক্লিনিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়