রোজ ৮০ কেজি দুধের চা বানান সুফিয়া
মাটির তৈরি চুলার ওপর বিশাল সাইজের ডেকচি। তাতে জ্বাল দেওয়া হচ্ছে ৭২ কেজি গরুর দুধ। এই দুধ দিয়ে তৈরি হবে দুধচা। আর সেই চা খাওয়ার জন্যে এখানে এসে সকাল-দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যা-রাত ভীড় করে বিভিন্ন জায়গার ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এই দোকানে যার হাতের চা খেতে প্রত্যহ এত মানুষের ভীড়, তার নাম সুফিয়া বেগম। বয়স ত্রিশ-বত্রিশের কোঠায়। তবে মালিক নন সুফিয়া, তিনি এই চায়ের দোকানের কর্মচারী। বছর তিনেক আগে তিনি এখানে যোগ দেন। খুব সকালে এসে দোকান খুলে, ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে চুলায় আগুন দেন তিনি। এরপর চলে তার চা তৈরি আর বিক্রির কাজ। এখান থেকে পাওয়া বেতনেই নির্বাহ করছেন তিন সন্তানসহ নিজের ভরণপোষণ, সন্তানদের পড়াশুনা।
সুফিয়া বেগম যে চায়ের দোকানে কাজ করেন, সেই দোকানের নাম-মীম টি স্টল। যশোর সদরের খয়েরতলা পেট্রল পাম্পের পাশে রাস্তার ধারে এর অবস্থান। পাশে নূরপুর গ্রাম। এখানে অনেক বসতি। সেই নূরপুরের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম ডাবলু। দোকানের তিনিই মালিক।
ডাবলু বলেন, “সুফিয়া আগে পরের বাসায় কাজ করতেন। হঠাৎ তিন সন্তানসহ স্বামী তাকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করে চলে যায়। ওইসময় তিনি টি স্টলে কাজ করবেন জানালে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সুফিয়া বেগম নিয়োগ পান প্রতিদিন ১২০ টাকা হাজিরায়। এখন তিনি পান আড়াই শ টাকা প্রতিদিন।”
যশোর সদরের নূরপুর গ্রামে এক হাজার টাকা ভাড়া বাসায় থাকেন সুফিয়া। সাথে ছেলে শিপন-ক্লাস সিক্সের ছাত্র, মেয়ে সুমাইয়া-ক্লাস ওয়ান আর ছোট মেয়ে সুরাইয়া এখনও স্কুলে যায় না।
সওজ এবং রেলের জায়গার মাঝে একটি বড় ড্রেনের উপরে কাঠের পাটাতনের ওপর দোকানের ভিত্তি। প্রায় ৩০ ফুট লম্বা লাইনের বেঞ্চ রয়েছে সেখানে, চা পান করতে আসা লোকজনের বসার জন্যে। প্রতিদিন ৮০ কেজি দুধ লাগে এই স্টলে-- জানান ডাবলু। বেশি বিক্রি হয় দুধচা। লাল চাও একেবারে কম যায় না। প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার কাপ দুধচা আর ৭-৮ শ কাপ লাল চা বিক্রি করেন তারা। দুধচার দাম ৮ টাকা।
নারী হয়েও এখানে কাজ করতে কোনো ধরনের সমস্যা হয় না বলে জানালেন সুফিয়া। দোকানমালিক তাকে খুবই বিশ্বাস করেন। পুরো দোকানের মালিকানা তার ওপরে রেখে তিনি অনেকটাই নিশ্চিন্ত বলে জানান ডাবলু।
সুফিয়া বলেন, “আগে পরের বাসায় কাজ করে যা আয় হতো, তার থেকে এখন খুব ভাল আুছ। সকাল থেকে দুপুর বা বিকেল পর্যন্ত চা তৈরি করি।”
বিকেলের পরে মালিক ডাবলু আসেন-- তার পালা চলে রাত দুইটা পর্যন্ত। যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের পাশে ব্যস্ততম রাস্তা আর পেট্রলপাম্পের পাশে অনেক বাহনই সেখানে থামে। গাড়ি থেকে নেমে চালক-যাত্রী সব তাড়া লাগান-- তাড়াতাড়ি এককাপ চা! চায়ের সুনাম অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। তাই নতুন-পুরনো শত শত মানুষ যাত্রাপথে এখানে ক্ষণিকের যতি টানেন--চায়ের তৃষ্ণা মেটাতে। ফলে এখানে এখানে ভীড় লেগেই থাকে দিন-রাত।
মফিজুল ইসলাম ডাবলু জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র চার ঘণ্টা তার দোকান বন্ধ থাকে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/একে
নিউজবাংলাদেশ.কম