মোল্লার বাহারি চা, প্রতিদিন বিক্রি ১২শ কাপ
রাস্তার পাশে চায়ের দোকান। অগোছালো, জীর্ণ পরিবেশ। হঠাৎ কেউ দেখে প্রশ্ন তুলতেই পারেন, এখানে আবার বিশেষ কী? উত্তরটা পেতে অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। চায়ের জন্য মানুষের দীর্ঘ সারি সব প্রশ্নের জট খুলে দেবে। চা বিক্রি করতে গিয়ে কথা বলার সময়টাও পান না মোল্লা। গুলশান-১ নাভানা টাওয়ারের পেছনে মোল্লার চায়ের দোকান। ১০ প্রকারের চা বিক্রি করেন তিনি। প্রতি ঘণ্টায় বিক্রি ১২শ টাকার। দিনশেষে এ তালিকায় যুক্ত হয় ১২শ কাপ চা।
চা বিক্রির এ ধরণকে গল্প গুজবও ভাবতে পারেন কেউ কেউ। কিন্তু মোল্লার চা খেয়ে মুখ বন্ধ না হয়ে উপায় নেই। চা নিয়ে সনাতন স্বাদ পাল্টে দিয়েছেন এ যুবক। চায়ের স্বাদে যুক্ত করেছেন নানা উপাদান। হাতের কাছে থাকা এমন জিনিস দিয়েও যে চা হয়, সেটা ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পাওয়া যায় ১০ প্রকার চা। এগুলোর মধ্যে কাঁচা মরিচের চা সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। স্ট্রবেরি দিয়ে বানানো চা খেয়েও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন অনেকে। দুধ-চা, মাল্টা চা ছাড়াও মোল্লা বিক্রি করেন পুদিনা পাতা, মাল্টা, আদা-লেবু, আমলকি ও কলার চা। বিশেষ সময়ে তার কাছে পাওয়া যায় আম, কাঁঠাল আর জাম্বুরার তৈরি চাও।
অবাক লাগছে? দাম শুনে অবাকের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। মাত্র ছয় টাকা গুনলেই পাওয়া যাবে মোল্লার বাহারি এসব চা। তবে স্ট্রবেরি চায়ের জন্য বাড়তি দুটাকা দিতে হবে ক্রেতাকে। আর কলার চা খেতে হলে অবশ্যই চার কাপ চা অর্ডার করতে হবে একসঙ্গে। কলা দিয়ে চার কাপ চা তৈরি হয় বলে এমন শর্ত।
মোল্লার চা খেতে খেতে কথা হয় তার সঙ্গে। আলাপচারিতায় বেরিয়ে এসেছে চা-বিক্রেতা হয়ে ওঠার গল্প। মোল্লার আসল নাম আব্দুল হামি। লোকে তার নাম দিয়েছে মোল্লা। শরীয়তপুর জেলার ডামুুড্যা থানায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছেন। নানা কারণে পরীক্ষাটা দেয়া হয়নি। ঢাকায় এসেছেন ২০০৭ সালে। ভগ্নিপতির পরামর্শে চায়ের দোকান দিয়ে বসেছেন।
প্রথম দিনের কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ঝিলিক দিয়ে ওঠে মোল্লার। বলেন, ‘প্রথম দিন চা বিক্রি করেছি ৭৮০ টাকার। আর এখন প্রতি ঘণ্টায় বিক্রি হয় ১২শ টাকার চা।’
জমজমাট চায়ের ব্যবসা ভালোই চলছে মোল্লার। চারপাশের মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিতি। কখনো কখনো দূর থেকেও মোল্লার চা খেতে ছুটে আসেন কেউ কেউ। বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশি ক্রেতাও আছে তার। চা খেয়ে প্রশংসা করতেই হবে এ আত্মবিশ্বাস মোল্লার আছে।
মোল্লার মূল পুুঁজি সততা আর সদ্ব্যবহার। তার প্রাণবন্ত কথা শুনে কেউ ফেরত যেতে চাইবেন না কোনোদিন। এক কাপ চা অন্তত খেতেই হবে। মোল্লা বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে থাকতে থাকতে অনেক কিছু শিখেছি। সবার সঙ্গে মজা করে সময় কাটাতেই ভালো লাগে। সবাইও আমাকে অনেক পছন্দ করেন।’
শুক্র কিংবা শনিবারের একদিন সপ্তাহে বন্ধ থাকে মোল্লার দোকান। বাকি দিনগুলোর ব্যস্ততা চা নিয়েই। চা বিক্রিতেই যেনো তার সব আনন্দ। হাসতে হাসতেই বলেন, ‘জীবনে কী আর আছে, আনন্দ নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।’
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএ/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম