হলুদ ফুলের প্রাণে ফসলের হাতছানি
ছবি: নিউজবাংলাদেশ
ওপর থেকে দেখলে মনে হয় পুরো মাঠ যেন ছেয়ে আছে হলুদ চাদরে। সকালের মিষ্টি সোনা রোদে আরও চকচক করছে সর্ষে ফুলে ভরে ওঠা হলুদের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। উত্তরের জেলা গাইবান্ধার গ্রামীণ জনপদের ফসলের মাঠগুলো প্রকৃতির অপরূপ রূপে সেজেছে এই শীতে। পথে-ঘাটে-মাঠে সরিষা ফুলের ঘ্রাণ মন মাতিয়ে তুলছে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চোখ জুড়ানো এই হলুদের অভ্যন্তরে লুকিয়ে আছে আগামী ফসলের হাতছানি।
গাইবান্ধায় চাষিরা বাড়তি ফসল হিসেবে এবার মাঠের পর মাঠ সরিষা চাষ করেছেন। গত বছরের মতো এবারও জেলার সাত উপজেলায় সর্ষের ভালো ফলন হয়েছে। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা খুশি। রাতদিন পরিশ্রম করে তারা এখন খেত পরিচর্চায় ব্যস্ত।
অন্যদিকে কৃষকের ঘরে আমন ধান ওঠার পর হলদে খেতগুলোয় এখন মৌমাছির রাজত্ব। মৌমাছিরা উড়ে উড়ে এক ফুল থেকে রেণু সংগ্রহ করে আরেক ফুলে বসছে।
সর্ষে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ফসলের মাঠে ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নানা বয়সের নারী-পুরুষ, শিশুসহ বিনোদনপ্রেমীরা। সর্ষে খেত ঘুরে ঘুরে দেখছেন তারা। কেউবা আবার মোবাইল ফোনে সেলফি তুলছেন। বিকাল শুরু হতে না হতেই শীতের কাপড় গায়ে জড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে সরিষার মাঠে ভিড় জমান প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীরা। সরিষা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে খেতের ভেতর ঢুকে পড়ছেন তারা। এতে দর্শনার্থীদের পায়ের তলায় পিষে যাচ্ছে সরিষার খেত। তাই দিনভর খেতের পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে কৃষকদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর গাইবান্ধার তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৮ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১৬ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছর ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। গত বছর আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় এবার জেলায় বেড়েছে সরিষার চাষ। এ বছর তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ ছিল না। তাই সর্ষের ভালো ফলন হওয়ায় ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।
সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের কৃষক আমীর হামজা বলেন, 'আমন ধান উঠার পর জমি তো এমনি পড়ে থাকে। বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করেছি। সার, কীটনাশক তেমন লাগে না। খরচ অনেক কম।'
আরেক কৃষক এমদাদুল হক বলেন, এবার কোনো দুর্যোগ ছিল না। আবাদে রোগবালাই হয় নাই। গাছের ফুল দেখে মনে হচ্ছে এবার ফলন ভালো হবে। বাজারে দাম ভালো থাকলে আশা করি লাভবান হব।
খোলাহাটি ইউনিয়নের ফারাজিপাড়া গ্রামের কৃষক সাজু মিয়া বলেন, সরিষা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে খেতের ভেতর ঢুকে পড়ছেন ছেলেমেয়েরা। এতে পায়ের তলায় পিষে যাচ্ছে সরিষার খেত। দিনভর খেতের পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে। আমরা বিড়ম্বনায় পড়েছি।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ আলী বলেন, ‘আমন ও বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করলে মাটির উর্বরতা বাড়ে। পরের ফসলের জন্য খুব বেশি চাষ করতে হয় না। জৈব সারও দিতে হয় না। সরিষা আবাদে সেচ লাগে না। সার ও কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হয় না। ফলে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায়।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাশিদুল কবির বলেন, ‘সরিষা চাষে তেমন কোনো রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। সরিষার শুকনো পাতা আর ফুল ঝরে বাড়তি জৈব সারের জোগান দেয় ইরি চাষের জন্য। অনেক কৃষক মৌসুমের শুরুতেই সবজি হিসেবে সরিষা শাক বিক্রি করে নগদ টাকা আয় করে থাকেন। লাভজনক বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা।’
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, 'জেলা কৃষি বিভাগ আধুনিক পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল সরিষা চাষে কৃষককে পরামর্শ ও সহায়তা করে আসছে। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় ১ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। সর্ষে চাষে কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। জেলায় ২৬ হাজার ৮০০ কৃষককে কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা লাভবান হবেন।'
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি