তালেবান দেশের একমাত্র নারী ড্রাইভার সারা
সারা বাহাই, বয়স চল্লিশ। জানা মতে এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের একমাত্র নারী ড্রাইভার। বিয়ে করেননি এই ভয়ে যে স্বামী তাকে গৃহবন্দি করে রাখবে, বাইরে কাজ করতে দেবে না। সাধারণত উত্তরাঞ্চলের বাল্খ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফের পথে পথে ভাড়ায় চালিত ট্যাক্সি চালাতে দেখা যায় তাকে।
গাড়িচালনার প্রতি তার রয়েছে অমোঘ আকর্ষণ, দুর্বার নেশা। তবে কট্টর তালেবান প্রভাবিত দেশের প্রথম এবং একমাত্র নারী গাড়িচালক হওয়ার পেছনে কিন্তু ব্যক্তিগত বাহাদুরির চেয়ে রাষ্ট্রের ভূমিকাটাই বড় নিয়ামক ছিল।
তিনি এখনও সেইদিনটি মানসপটে ষ্পষ্ট দেখতে পান যেদিন তিনি প্রথম স্টিয়ারিং-হু্ইলের পেছনে বসেন।
কিন্তু একটি দেশ যেখানে মেয়েদেরকে সবসময় পুরুষদের চেয়ে হীনবল ভাবা হয় এবং শুধুমাত্র লিঙ্গগত পরিচয়ের কারণে প্রায়ই শিকার হতে হয় নির্মম নিষ্পেষণ-নির্যাতনের-- সেই দেশের একজন নারী হিসেবে সারা অবশ্যই অন্য নারীদের সামনে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি সেই নারী যিনি আফগানিস্তানের মতো কট্টর মোল্লা প্রভাবিত একটি দেশের নারী হয়ে নিজের রুটি-রুজি নিজেই উপার্জন করেন। শুধু তাই না, তিনি তার পরিবারের ডজনখানেক মানুষের ভরণপোষণও করেন।
তবে অত পড় পল্টনের মত একটা পরিবার চালালেও নিজে বিয়ে থা করেননি। কারণ, তাকে তার বাবা-মাকেও সহোদরদের কথা ভাবতে হয়েছে। তাদের পেট চালাবার দায়ও অনেকটাই তার ওপর চেপেছিল। আর তাই তিনি ভয় পেতেন, বিয়ে করলে স্বামী তাকে ড্রাইভিং করতে দেবে না। নিজে বিয়ে করেননি তবে দুটি বাচ্চাকে দত্তক নিয়েছিলেন যারা এখন হাইস্কুলে পড়ে। তালেবান জঙ্গিরা তার বোনজামাইকে গুলি করে হত্যা করার পর তিনি তার বিধবা বোন আর সাত সন্তানের দায়িত্বও নেন। এখন তিনি ১২জন সদস্যের এক বিশাল পরিবারের কর্তা।
ফেলে আসা দিনের স্মৃতি তাকে উজ্জীবিত করে। প্রথম গাড়ি চালনা? সেটা ২০০১ সাল। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সেনা অভিযানে দেশের ক্ষমতা থেকে তালেবানরা মাত্র উৎখাত হয়েছে। ওই অনুভূতি সম্পর্কে সারা বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল যেন আকাশে উড়ছি, আর আমি পুরোপুরি গাড়িচালনার প্রেমে পড়ে গেলাম যেন।” এরপর আর ড্রাইভিং সিট ছাড়েননি।
তার সাদা ও হলুদরঙা টয়োটা করোলা ট্যাক্সিটি ঝকঝকে তকতকে রাখেন সব সময়। গাড়ির সিটগুলো ঢাকা চিত্তাকর্ষক সুতোর কাজে তৈরি মনোলোভা কাভারে।
জীবনের বড় একটা সময় দেশের মোল্লাদের নানান ছুঁৎমার্গ আর বিধি-নিষেধের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছেন তিনি। এসব বিধি-নিষেধের অন্যতম হচ্ছে, মেয়েরা ঘরের বাইরে কাজ করবে না!
তালেবান হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, “অজ্ঞাত ফোন কল থেকে আমাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। তারা আমাকে বলে যেহেতু আমি একজন নারী তাই শহরে আমার গাড়ি চালানো উচিৎ নয়। কারণ, এটা ইসলাম বিরুদ্ধ। কেউ কেউ ফোনে বলে-- যদি আমি গাড়ি চালানোর কাজ বন্ধ না করি তাহলে আমাকে হত্যা করবে।”
পুরুষ যাত্রীরা অনেকেই তার অবস্থান দেখে ঈর্ষা বোধ করে। কেউ কেউ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন। কিন্তু তারা যা বলে বা ভাবে তাকে পাত্তা দেন না সারা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমি আমার যেটুকু ক্ষমতা আছে তা দিয়েই আমার দেশকে বদলে দেবো।”
তিনি মনে করেন নিজ দেশকে শান্তি, সমৃদ্ধি আর সুখের রাজ্য হিসেবে গড়তে হলে মেয়েদের অবশ্যই জেগে উঠতে হবে। সূত্র: এমিরেটস২৪৭
নিউজবাংলাদেশ.কম/একে
নিউজবাংলাদেশ.কম