সাধু বাবার বয়স আসলে কত!
একদিন একটা ছেলে এসে বলল, লাদেনের নির্দেশে হাওড়া ব্রিজের ছবি তুলব। এজন্য এফিডেভিট করব। ওই মুহূর্তেই তাকে ভাগিয়ে দিয়েছি। তবে বয়স সংক্রান্ত হলফনামায় আমাদের কার্যত করার কিছু নেই। কত কত লোক হলফনামা করাতে আসে। কত তথ্য। সব যাচাই করা যায় নাকি? একদিন একটা ছেলে এসে বলল, লাদেনের নির্দেশে হাওড়া ব্রিজের ছবি তুলব। এজন্য এফিডেভিট করব। ওই মুহূর্তেই তাকে ভাগিয়ে দিয়েছি। তবে বয়স সংক্রান্ত হলফনামায় আমাদের কার্যত করার কিছু নেই।
এভাবেই হলফনামায় মিথ্যে তথ্য দেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান ভারতের ব্যাঙ্কশাল কোর্টের নোটারি পাবলিক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেখা গেছে, কোনো কোর্ট চত্বরে ঢুকে নোটারি ও উকিলের সাহায্যে যে কেউ ইচ্ছেমতো হলফনামা বানিয়ে ফেলতে পারে। ধরা যাক, কারো বয়স ৭০ বছর। হলফনামায় সে অনায়াসে ৯০ হয়ে যেতে পারে। কেউ আটকাবে না। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে কোনো রকমের ঝামেলার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।
আবার সরকারি পদস্থ কর্মকর্তাদের দেয়া ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেটকে অনেকটা বেদবাক্য হিসেবে মেনে নেয়া হয়। তাদের কেউ কেউ নথি যাচাই না করেই প্রশংসাপত্র দিয়ে দেন। আর এভাবেই স্বঘোষিত এক সাধুবাবা ১১৮ বছরের চৌকাঠ ছুঁয়ে ফেলেছেন।
শিবানন্দ স্বামী নামে বাঙালি ওই সাধুবাবা ৫ বছর আগে আদালতে হলফনামা দিয়ে ঘোষণা করেছেন, তার বয়স ১১৩ বছর। ওই হিসেব হাতে রাখলে শিবানন্দের বয়স এখন ১১৮। তার এ দাবির সমর্থনে তার হাতে রয়েছে ২০১০ সালে করা ভারতীয় পাসপোর্ট। এ পাসপোর্টে জন্মতারিখের জায়গায় পরিষ্কার লেখা রয়েছে, ৮/১৮৯৬।
পাসপোর্ট অনুযায়ী শিবানন্দ সুভাষচন্দ্র বসুরও বয়ঃজ্যেষ্ঠ। যদিও পাসপোর্ট বয়স প্রমাণের কোনো প্রামাণ্য দলিল নয়। এরপরও সরকারি দলিল হিসেবে এর গুরুত্ব সবখানেই রয়েছে। এ গুরুত্ব মেনে নিলে এ মুহূর্তে বিশ্বের প্রবীণতম মানুষ শিবানন্দ স্বামী।
তার সত্যিকারের বয়স কত তা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। কেননা শিবানন্দের হলফনামায় স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে যে নোটারির স্ট্যাম্প তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে ওই নামে কলকাতার দুই আদালতে দুই নোটারিকে পাওয়া গেছে।
শিবানন্দের এফিডেভিটে স্বাক্ষরকারী আইনজীবী দীনবন্ধু চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, যার নামে হলফনামা উপস্থিত ব্যক্তি সে-ই কীনা তা যাচাই করা আইনজীবীর কাজ নয়। ওই ব্যক্তি আইনজীবীর সামনে হলফনামায় সই করেন।
দীনবন্ধু আরো বলেন, আইনজীবী তলায় সই করে শুধু ঘোষণা করেন, হলফনামাকারী তার সামনে স্বাক্ষর করেছেন। এফিডেভিটে কে কত বয়স লিখছে তা নিয়ে মাথা ঘামানো আমাদের দায়িত্বে পড়ে না।
ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বুদ্ধদেব ঘোষ গণমাধ্যমকে জানান, যদি কেউ দাবি করে যে তার নাম জওহরলাল নেহরু, বাবার নাম মতিলাল নেহরু এরপরও আইনজীবী এফিডেভিটে স্বাক্ষর করে দেবে। কেননা হলফনামার তথ্য যাচাই করা আইনজীবীর কাজ নয়।
সল্টলেকে এক ভক্তের বাড়িতে বসে শিবানন্দ স্বামী গণমাধ্যমকে বলেন, জীবনভর কঠোর সংযম-শৃঙ্খলায় কাটিয়েছি। তাই এত বয়সেও সুস্থ রয়েছি।
শিবানন্দের পাসপোর্টে উল্লেখিত বেহালার ঠিকানায় গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা দেখতে পেছেন ওটি আসলে দীনবন্ধুর বাড়ি। শিবানন্দের সঙ্গে পরিচয়ের কথা দীনবন্ধু গোপন করেননি। জানিয়েছেন, একবার তার বেহালার বাড়িতে শিবানন্দ এসেছিলেন। তিনিও এক সময়ে তার ভক্ত ছিলেন।
দীনবন্ধু জানান, উঁচু দরের এক আমলা শিবানন্দকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। সেখানে তার বয়সও উল্লেখ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই আমলা এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য বনকর্মকর্তা সন্দীপন মুখোপাধ্যায়। ৫ বছর আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে থাকতে তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন, শিবানন্দ স্বামীর জন্ম ১৮৯৬ সালে।
এ ব্যাপারে তিনি জানান, এক সহকর্মী অনুরোধ করায় কাজটি তিনি করে দিয়েছিলেন। কলকাতায় রিজিওন্যাল পাসপোর্ট অফিসার গীতিকা শ্রীবাস্তব গণমাধ্যমকে জানান, ১৯৮৯ সালের পরে জন্ম হয়ে থাকলে শুধু বার্থ সার্টিফিকেট গ্রাহ্য। এর আগে জন্ম হলে লাগবে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড।
তিনি আরো বলেন, যারা বয়স্ক, লেখাপড়া করেননি তারা হলফনামা দেন। হলফনামা, ঠিকানার প্রমাণপত্র ইত্যাদি পুলিশকে পাঠানো হয় যাচাইয়ের জন্য। পুলিশ তাদেরকে জানিয়েছিল, শিবানন্দের কাগজপত্র সব ঠিকঠাক। এরই পর তাকে পাসপোর্ট দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, হলফনামা সাধারণত চ্যালেঞ্জ করা হয় না। ধরেই নেয়া হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সত্যি বলছে। তাই শিবানন্দের বয়স নিয়ে তাদেরও সংশয় জাগেনি। তবে হলফনামার তথ্য মিথ্যে প্রমাণিত হলে ছ’মাস পর্যন্ত কারাদন্ডের বিধি রয়েছে আইনে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এটিএস
নিউজবাংলাদেশ.কম