রঙিন কবুতরের ‘হিরো’ প্রতিযোগিতা
ফিচার ডেস্ক: লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি বা সবুজ-- শরীরজুড়ে এমন সব বাহারি রঙ নিয়ে একঝাঁক কবুতর আকাশে উড়তে দেখলে যে কেউ বিষ্মিত হবেন। কারণ; কবুতরের পালকের রঙ সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে এমনটি হতে দেখা যায় না। কিন্ত স্পেনে সত্যি এমন মনোরম দৃশের দেখা মেলে।
প্রতি বছর জুন-সেপ্টেম্বরের কোনো এক উজ্জল আলোর বিকেলে এমন সব বাহারি কবুতরের উড়াল প্রতিযোগিতার দৃশ্য দেখা যায় স্পেনের আকাশে। শরীরে উজ্জল সব রঙ পেইন্ট করে একটি স্ত্রী কবুতরের সাথে অনেকগুলো পুরুষ কবুতরের এমন নয়নাভিরাম প্রতিযোগিতার নাম ‘কলম্বিকালচারা’।
স্পেনে রঙিন কবুতর উড়ার এই আকর্ষনীয় জাতীয় চ্যাম্পয়িনশীপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর জুন মাসে।
‘কলম্বিকালচারা’ নামের রঙিন কবুতরের উড়াল প্রতিযোগিতার শুরু সেই ১৭০০ সালের দিকে। পরে এটি স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া, মার্সিয়া এবং অ্যালিকান্তে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সে সময় প্রতিযোগিতায় নানা রঙে রাঙানো ৯০টি পুরুষ কবুতরের সাথে ছিল মাত্রই ১টি স্ত্রী কবুতর। আর প্রতিযোগিতায় কবুতরদের ওড়ার গতি খুব বেশি না থাকলেও দৃশ্যটি ছিল খুবই আকর্ষণীয়।
তবে; কবুতরের পালকের রঙ বা উড়ার গতি এসবের কোনোটিই কিন্তু প্রতিযোগিতার মূল বিষয়বস্তু নয়।
৯০টি পুরুষ কবুতরের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ১টি মাত্র স্ত্রী কবুতর। আর ওই স্ত্রী কবুতরটির পাশাপশি যে পুরুষ কবুতরটি সব চেয়ে বেশি সময় উড়তে পারবে সে-ই হবে বিজয়ী। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী কবুতরটিকে বিবেচনা করা হয় ‘হিরো বা নায়ক’ হিসেবে।
কবুতরের মালিকরা তাই নিজেদের কবুতরটি যাতে প্রতিযোগিতায় জিততে পারে সে জন্য অবলম্বন করেন নানা কেরামতি। কেউ কেউ কবুতরের শরীরে গোলাপি আর নীলের বৈদুতিক রঙের আভা দিয়ে পেইন্ট করেন। উদ্দেশ্য, যাতে অন্য কবুতরগুলো তার কবুতর থেকে দূরে থাকে। আর এই সুযোগে নিজের কবুতরটি সহজে প্রতিযোগিতায় একমাত্র স্ত্রী কবুতরটির পাশাপাশি বেশি সময় ধরে উড়তে পারে।
‘কলম্বিকালচারা’ বা কবুতরের উড়াল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া একমাত্র স্ত্রী কবুতরটি যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য তার পিঠে জুড়ে দেয়া হয় একটি রেডিও ট্রান্সমিটার।
তবে এমন প্রতিযোগিতা সাধারণ মানুষের কাছে সাময়িক বিনোদন হলেও অংশগ্রহনকারীদের কাছে এটি খুবই মূলবান। কারণ; প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর জন্য পুরষ্কারের অংকটি হয় বেশ বড়সড়। কখনো কখনো এই অংক কয়েক হাজার ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তাই বিজয়ীর পুরষ্কারটি জিততে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারীরা তাদের পোষা কবুতরটিকে সারা বছর ধরে নানা কৌশল রপ্ত করতে প্রশিক্ষিত করে তোলেন।
অংশগ্রহনকারীরা তাদের কবুতরের জন্য বেছে নেন গতিশীল এবং বাহারি সব নাম। এল বুরো, দ্য ডান্কি, নো মাস লাগরিমাস বা নো মোর টিয়ারস এমনকি ফুটবলার মেসির নামে কেউ কবুতরের নাম রাখেন ‘লায়নেল মেসি।’
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে
নিউজবাংলাদেশ.কম