ইন্দোনেশিয়ায় খাঁচায় বন্দী রোহিঙ্গাদের জীবন
ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপে দাস হিসেবে বন্দী জেলেদের আহরিত সামুদ্রিক খাবার মার্কিন সুপারমার্কেট, রেস্টুরেন্ট ও নিত্যপণ্যের দোকানগুলোতে পৌঁছে যাচ্ছে রসনা বিলাসের পসরায়।
কিন্তু এই জেলেদের ইন্দোনেশিয়ার ছোট একটি দ্বীপে খাঁচায় বন্দী জীবন কাটাতে হয়। সমুদ্রে মাছ আহরণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজে বাধ্য করা হয়। স্টিংরের লেজ দিয়ে নির্মমভাবে প্রহারও করা হয়।
বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লোকগুলোকে থাইল্যান্ড হয়ে বেনজিনা নামের এই গ্রামটিতে নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের জোরপূর্বক মাছ আহরণ করানো হয়। আহরিত মাছ আবার থাইল্যান্ড থেকে বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলেদের বন্দী জীবনের গ্লানিবহন করে এই মাছগুলো মূলত ক্রোগার, আলবার্টসন্স, সেফওয়ে সহ ওয়াল-মার্টের মতোন বড় বড় মার্কিন খাদ্য বিপনণকারীদের বিক্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে ভোক্তাদের রসনা টেবিলের বিলাস বাড়িয়ে তোলে।
এপি দীর্ঘ এক বছর ধরে বেনজিনা গ্রামে দাস হিসেবে বন্দী ৪০ জনেরও বেশি জেলের সাক্ষাৎকার নিয়ে সেখানকার চিত্র তুলে এনেছে।
ইন্দোনেশিয়ার ওই গ্রামটি থেকে স্কুইড, স্নেপার, শ্রিম্প বোঝাই এক মার্কিন জাহাজকে অনুসরণ করে এবং থাই উপকূলজুড়ে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এপি।
আগে এপির প্রতিবেদক চাররাত ধরে জাহাজে পণ্য তুলে দিতে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি, হিমাগার ও মাছ বাজার থেকে থেকে পণ্যবোঝাই হয়ে আসা ট্রাকগুলোকে অনুসরন করেন।
এভাবে অনুসরণের মাধ্যমে বেনজিনা গ্রামে পৌঁছানোর পর দাস হিসেবে বন্দী জেলরা প্রতিবেদকের কাছে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাতর অনুনয় করেন।
`আমি, আমরা সবাই বাড়ি ফিরতে চাই` বলে দাস হিসেবে বন্দী এক জেলে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন। `আমাদের পিতা-মাতার সঙ্গেও অনেকদিন কোন যোগাযোগ নেই, নিশ্চিত আমরা বেঁচে নেই বলেই তারা ধরে নিয়েছেন`, যোগ করেন ওই জেলেটি।
এখান থেকে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও সামুদ্রিক মাছের চালান গেলেও এপি মার্কিন জাহাজটিকেই অনুসরণ করেছে। কারণ, দেশটিতে বাণিজ্যিক জাহাজের রেকর্ড সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এই প্রতিবেদকের অনুসরণ করা জাহাজটিও মার্কিন বাণিজ্যিক জাহাজ কর্তৃপক্ষের রেকর্ড তালিকায় রয়েছে।
সমুদ্রে মাছ আহরণে যাওয়ার পর অধিকাংশ জেলেই ২০/২২ ঘন্টা টানা কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তুু বিশ্রাম নিতে দেখলেই তাদের ওপর চলে নির্যাতন। বিষাক্ত স্টিংরের লেজ দিয়ে প্রহার করা হয় তাদের। এমন কি পানিও দেওয়া হয় না তাদের।
বন্দী দাস জীবন থেকে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া হ্লাঙ মিন নামে এক জেলে বলেন, এদের অনেকেই সমুদ্রেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
তিনি বলেন, আমেরিকান ও ইউরোপিয়ানরা যদি এসব মাছ খেয়ে থাকে, তবে অবশ্যই আমাদেরকে স্মরণ করা উচিত। সমুদ্রের তলায় মানুষের হাড় দিয়ে তৈরী এক পাহাড় রয়ে গেছে। এই হাড়গুলো দিয়ে একটি দ্বীপও হয়ে যেতে পারে।
ছোট উপকূলীয় গ্রামটি কার্যত পুসাকা বেনজিনা রিসোর্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ তলা অফিস কম্পাউন্ডে জেলেদের বন্দী করে রাখার খাঁচাও দেখতে পাওয়া যায়।
বেনজিনায় মৎস আহরণের জন্য একমাত্র এই ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানিটি কর্তৃপক্ষের অনুমতিপ্রাপ্ত। কোম্পানিটির রয়েছে ৯০ টির অধিক মাছ ধরার ট্রলার।
এপির প্রতিবেদক জাকার্তায় পুসাকা বেনজিনার অফিসে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করেও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে পারেন নি। এমনকি ফোন করে ও চিঠি দিয়েও কোন সাড়া মেলে নি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এসজে
নিউজবাংলাদেশ.কম