News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৪ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১২:৫৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

দানিউবের দৈত্য!

দানিউবের দৈত্য!

মাছ কখনো আবার দৈত্য হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘দানিউব স্যামন’ নাম করা যায় সহজেই। আকারে প্রায় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সমান আর এর আয়ু হতে পারে ৩০ বছর পর্যন্ত। এটি খুবই দ্রুতগতির, সুঠাম, অভিজাত এবং খুবই সুন্দর বিশালাকার এক মাছ। আর এর আকার দেখে একে দৈত্য ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় না।

এক সময় দানিউব অববাহিকাজুড়ে এ মাছটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো বলে এর এমন নাম। তবে বলকান অঞ্চল এ মাছটির শেষ আবাসস্থল। আর এখন তা বাঁধ নির্মাণের কারণে হুমকির মুখে।

পরিবেশবাদী সংগঠন, রিভারওয়াচের পরিচালক উলরিখ আইশেলমান বলছিলেন এ মাছের কথা। ল্যাটিনে একে বলা হয় হুচো হুচো, জার্মানে হুচেন এবং ইংরেজিতে এটি পরিচিত দানিউব স্যামন নামে।

এখন বলকান অঞ্চলই এ মাছের শেষ আশ্রয়স্থল। স্লোভেনিয়া এবং মন্টেনেগ্রোর উপত্যকার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা নদী এবং জলপ্রবাহের মাঝেই এখন বসবাস করে দানিউবের এ দৈত্যরা।

স্লোভেনিয়ার সাভা নদীর পাড় দিয়ে জলাভূমির বনে ধীর পায়ে হেটে যেতে যেতে আইশেলমান বলেন,  “আমরা ইউরোপিয়ানরা এশিয়ার শেষ বন্য বাঘ নিয়ে অনেক কথা বলি এবং তাদের রক্ষার জন্য দাবী জানাই। কিন্তু আমাদের শেষ বাঘের ওপর হুমকি নিয়ে অন্ধের মতো আচরণ করি – দানিউব স্যামনই আমাদের সেই বাঘ।”

আইশেলমান এর সামনে এক ব্যক্তি সাদা একটি বালতি হাতে নদীর উপরিভাগে জমে থাকা তুষার খুব সাবধানে সরাচ্ছিলেন। শীতনিদ্রা থেকে মাত্র নদীটি জেগে উঠছে। বালতির ভেতর পাঁচটি তিন বছর বয়সী নীল-সবুজ, ধুসর-সাদা- রুপালী মাছ। প্রতিটি প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা, ছোট জায়গার ভেতর এঁকেবেঁকে চলাচল করছে।

অস্ট্রিয়ার গ্রাজে বসবাসরত একজন মার্কিন বিজ্ঞানী  স্টিভেন ওয়েইস ব্যখ্যা করেন “এ মাছ আমাদের নদীর স্বাস্থ্যের একটি ভাল নির্দেশক”।

ওয়েইসসহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যেখানে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে নতুন বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক মৎস্যপ্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। বিষেশ করে দানিউব স্যামন মাছগুলোর প্রচুর জায়গা, দ্রুত বহমান ও পরিষ্কার পানি এবং খুব নির্দিষ্ট আবাসস্থলের প্রয়োজন।

পরিবেশবিদরা স্লোভেনিয়া মৎস্যশিকারী সমিতিকে সাথে নিয়ে এখন দানিউব স্যামনকে রক্ষা করার জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। বলকান অঞ্চলের নদীগুলোতে কৃত্রিমভাবে প্রজনন করা দানিউব স্যামন ছেড়ে দিচ্ছেন তারা ।
স্যামনের প্রজনন ব্যাখ্যা করে ওয়েইস বলেন, “নদীর তলদেশে পছন্দসই একটি জায়গা বেছে নেন স্যামন রাণী, আর তার পাশে খুব যত্নের সাথে অবস্থান নেন রাজা স্যামন। তারপর তারা দুজন মিলে একটি নৃত্য করতে থাকেন, আর সেই নৃত্যের তোড়ে নুড়ি পাথর সরে কিছুটা জায়গা তৈরি হয় ডিম পাড়ার জন্য। এরপরই রাজা স্যামন তার বীজ ছড়িয়ে দেয় পানির তলদেশে একটি মেঘের আকারে।”

পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হলে রাণী স্যামনটি তার লেজ দিয়ে বালির একটি আস্তর তৈরি করে ডিমের ওপরে। প্রায় এক মাস পর জন্ম হয় নতুন মাছ দৈত্য মাছ দানিউব স্যামনদের।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়