পরিশ্রমের পর সহজেই হয়ে উঠুন চাঙা
আপনি নিশ্চয়ই স্পিন ক্লাস শেষে শরীর থেকে অনেকখানি ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলেছেন। এবং বাসায় ফিরে আস্ত একবাটি আইসক্রীম খাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। অবশ্য খেতেই পারেন, এতে দোষের কি? কিন্তু গবেষণা বলে, অধিকাংশ মানুষই শারীরিক পরিশ্রমের পর ভারি খাবার (রিচ ফুড) খান এবং যতটুকু ক্যালরি তারা শরীর থেকে পুড়িয়ে ফেলেছেন ঠিক ততটুকুই তারা আবার গ্রহণ করছেন। শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের পর হালকা খাবার খাওয়া কোনো দোষের বিষয় নয়। কিন্তু আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দেয়ার আগে ভেবে দেখবেন আপনি যা খাচ্ছেন তাতে আবার মুটিয়ে যাবেন নাতো, অথবা যা খাচ্ছেন তাতে আপনার শরীরের চাহিদা মিটছে তো? শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম পরবর্তীতে কিছু নিয়ম মেনে চললেই আপনি হতে পারেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। নিম্নে এবিষয়ে কিছু টিপস দেয়া হলো।
খাবারের পূর্বে কায়িক পরিশ্রম: যদি আপনি কায়িক পরিশ্রমের পর সবসময়ই ক্ষুধার্ত থাকেন এবং কতটুকু ক্যালরি আপনি পোড়ালেন সেব্যাপারে সচেতন থাকেন তাহলে খাবারের আগেই কায়িক পরিশ্রমের ব্যাপারে একটু পরিকল্পনা করে ফেলুন। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে আপনি অতিরিক্ত হালকা খাবার না খেয়েও ক্যালরি পোড়াতে এবং নিজেকে সতেজ রাখতে পারবেন। আর এই কৌশল আপনি সকালে কিংবা রাতের বেলা খাটাতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হালকা খাবার খান এবং সকালের ব্যায়ামের পর বেশ ভালো একটা নাস্তা খান। দুপুরে জিমে কিছুটা সময় ব্যয় করার পর একটা স্যান্ডউইচই যথেষ্ট। অথবা রাতে খাবারের সময়টা একটু এগিয়ে দিতে পারেন যাতে আপনি রাতের কসরতটাও সেরে ফেলতে পারেন।
কায়িক পরিশ্রমের সময় চিন্তামুক্ত থাকুন: শারীরিক কসরত সম্পর্কে যতটা পারেন কম ভাববেন, এতে কসরত পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে এই ভাবনা জেকে বসবে না।
শর্করা এবং প্রোটিনের সমন্বয় ঘটান: শারীরিক কসরতের পর যখন শরীরের ঘাটতি মেটানোর দরকার হয় তখন কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের সমন্বয় করা বেশ জরুরী। কারণ আপনার শরীরের এনার্জি লেবেল এবং পেশীকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের জুরি নেই। এক ঘণ্টার কম কসরত করলে আপনার খাবারে ১৫০ থেকে ২০০ ক্যালরি রাখুন। আর এক্ষেত্রে বাদাম/বাদামের মাখন এবং জেলি অথবা পনির খেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি এক ঘণ্টার বেশি কসরত করেন এবং পর্যাপ্ত খাবার না থান, তাহলে আপনার শরীরে প্রতি পাউন্ড অনুযায়ী আধা গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রাখতে পারেন। উদাহরণ স্বরুপ ১৪০ পাউন্ড ওজনের একজন মানুষের দরকার ৭০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ১৮ গ্রাম প্রোটিন।
দুধ খান: পরবর্তী খাবার খাওয়ার আগ পর্যন্তু দুধ হতে পারে আপনার শরীরের প্রোটিন ঘাটতি পূরণের অন্যতম উপাদান। গবেষণায় দেখা যায়, দুগ্ধজাত খাবারের ক্ষেত্রে আপনি কম ক্যালরি যুক্ত চকলেট খেতে পারেন। এজাতীয় খাবার গতানুগতিক স্পোর্টস পানীয় থেকে অধিক কার্যকরী।
অভ্যাসের বাইরের খাবার বন্ধ করুন: মাঝে মধ্যে শারীরিক কসরতের পর ভারি খাবার খাওয়ার পরিনাম ভালো হয় না। যখন আপনি জিম থেকে বের হওয়ার পর অবিরত ৫০০ ক্যালরি খাবার খান, তখন সেটা আপনার অভ্যেসে পরিণত হয়ে যায়। এবং তখন আপনি যতক্ষনই কসরত করুন না কেন তাতে কোনো লাভ হয় না। তাই ভিন্ন খাবার এবং ভিন্ন কসরতের চিন্তা করুন। কম সময় পরিশ্রম করে কম ক্যালরি গ্রহন করা এক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। আর সবসময় আপনার ক্ষুধাকে আমল দিন।
যন্ত্রের উপর পুরোপুরি আস্থা রাখবেন না: আজকাল অনেকেই ক্যালরি পোড়ানোর ক্ষেত্রে ফিটবিট জাতীয় বিভিন্ন যন্ত্রের উপর নির্ভর করেন। কিন্তু ২০১৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই যন্ত্রগুলো ক্যালরি পোড়ানোর শতভাগ পরিসংখ্যান দিতে পারে না।
জলখাবার: সারাদিনে দুই থেকে তিনবার জলখাবার সেরে নিন, এটা উপকারে আসে। দিনে মূলত তিনবার খাবার গ্রহণ করে থাকি আমরা। টুকটাক স্ন্যাক গ্রহণ, সকাল থেকে দুপুর বা দুপুর থেকে রাতের দীর্ঘ সময়ের মাঝখানের সময়টাতে, ক্ষুধাকে অতিরিক্ত রকম বাড়তে দেয় না। সুতরাং মূল খাবার খাওয়ার সময় অতিক্ষুধার্ত হয়ে বেশি খেয়ে ফেলার ঝুঁকি কমে যায় অনেকটাই, যেটা শরীরের জন্যে উপকারী। এভাবে দুই থেকে তিনবার জলখাবার গ্রহণে শরীরে ক্যালরির ভারসাম্যও বজায় থাকবে।
ক্যালরি কমানোয় অতিআত্মবিশ্বাস: মানবমনের এ বিষয়টিকে ক্যালরি কমানোয় অতি আত্মবিশ্বাসই বলা চলে। উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে। মনে করুন, বেশ কিছুটা সময় দড়ি লাফ খেলার পর আপনি ভাবলেন, যাহ বাবা, অনেক তো ক্যালরি কমে গেল। আসলে কিন্তু তা নয়। আপনি যা ভাবছেন, ক্যালরি কমেছে তার মাত্র চার ভাগের একভাগ, অন্তত। আপনার জন্যে কিন্তু আসলেই জরুরী এটা জানা, যে আপনি কত ক্যালরি পোড়ালেন। একটা যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। এটাকে বলে হার্ট রেট মনিটর। বুকের ওপর পেঁচিয়ে এটা পরা হয়। এটায় বিশেষ সেন্সর থাকে, যা স্বয়ংক্রীয়ভাবে আপনার হাতঘড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। দুয়ের মিলিত ক্রিয়া আপনাকে জানাবে পুড়ে যাওয়ার ক্যালরির সঠিক পরিমাণ। সঠিক পরিমাণটি জানার পর, তারচেয়ে কম কিলোরির খাবার গ্রহণ করতে হবে, যদি আপনি শরীরের ভর কমাতে চান। যদি বাড়াতে চান তো ঐ পরিমাণের চেয়ে বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
জল পান: সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হয় এই জল পানের বিষয়টা। শরীর যখনই পানি হারাচ্ছে, বিশেষ কোন পরিস্থিতি ব্যতীত, তখনই তাকে তা মিটিয়ে দেয়া উচিৎ। যখনই তৃষ্ণার্ত হচ্ছেন, তখনই পানি পান করুন, অল্প হলেও। তবে ক্লান্ত অবস্থায় একবারে খুব বেশি পানি করবেন না। শরীরে লবণের পরিমাণ কম থাকলে তখন খুব খারাপ বোধ হতে থাকবে। অনেকেই বলে থাকেন খাবার আগে পানি পান করতে, এটা উপকারী। খাবার আগেই পাকস্থলিতে পানি পৌঁছে গেলে খাওয়ার রুচি তুলনামূলক কমে যায়, ফলে বেশি খেয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে না।
খাওয়াটা কি আসলেই দরকার: কবি রেনে মারিয়া রিলকের একটা কথা আছে, যদি মনে করো না লিখেও বাঁচতে পারবে, লিখো না। ঠিক এই কথা খাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যখন মনে করছেন না খেয়েও থাকতে পারবেন, খাওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন নেই; তখন চোখের সামনে যত লোভনীয় খাবারই এসে থাকুক না কেন, মন অন্য দিকে ফিরিয়ে দিন। আরেকটা কথা। এটা শুনে থাকবেন, শরীরের পেশি সুপুষ্ট রাখার জন্যে, কঠোর পরিশ্রম হয়ে গেলে চটজলদি কিছু খেয়ে নিতে হবে। খুব বেশি ভুল শোনেননি, কিন্তু এখানে সময়ের একটা মাত্রাজ্ঞান থাকা চাই। যেমন, যদি সারাদিন পরিশ্রম করার পর আবার আগামীকাল সকালেই আপনাকে ব্যায়ামাগারে যেতে হয়, তো ক্যালরির চাহিদা মিটিয়ে দিন চটজলদি। কিন্তু যদি আগামী দুই তিন দিনের ভেতর খুব পরিশ্রমের কোনো কাজ না থেকে থাকে, তো রোসো!
কাজের সময় তৎক্ষণাৎ ক্ষয়পূরণ: যদি টানা দুই থেকে তিন ঘণ্টা কোনো কায়িকশ্রমের কাজ করে যেতে হয়, তো তখনকার খাবারগ্রহণ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিৎ। ধরুন আপনি মোটরবাইক চালাচ্ছেন, কিংবা ম্যারাথন দৌড়ে ঘামছেন, তখন জেলি বা খেলোয়াড়দের পুষ্টিকর পানীয়, একটু একটু করে চুমুকে রাখতে পারেন। তাহলে সেই তিন ঘণ্টা পর, বিধ্বস্ত হয়ে ধসে পড়তে হবে না। আর, অমন পরিশ্রম চলাকালে সময় বের করে প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর ৩০ থেকে ৬০ গ্রাম ভরের কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে পারেন। এরূপ ভরের কার্বোহাইড্রেটে সচরাচর ১২০ থেকে ২৪০ ক্যালোরি থেকে থাকে। এ সময় আমিষ জাতীয় কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেন? কারণ এটা হজমে পাকস্থলির কষ্ট হয় বেশি, কাজের জন্যে প্রয়োজনীয় ক্যালরিটুকু অপচয় হয়ে যায় ওখানেই।
টিআর/
নিউজবাংলাদেশ.কম ডেস্ক