লাল তেঁতুলের গল্প
তেতুলের রঙ কখনো রক্ত বর্ণের হয়? সাধারণত তেতুল বলতেই জিভে জল আসা যে ফলটির কথা মনে আসে তার রঙ ঘন সবুজ। আর ভেতরটা কাচা অবস্থা সবুজাভ এবং পাকলে অনেকটা হলদে বা হালকা খয়েরী হতে দেখা যায়। কিন্তু তেতুলের ভেতরটা রক্তের মতো টকটকে লাল হওয়ার কথা প্রায় অবিশ্বাস্যই। তবে সত্যিটা হলো বিরল প্রজাতির লাল তেতুলের এই গাছ রয়েছে আমাদের দেশেই।
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন লাল তেঁতুল গাছের অবস্থান খোকসা উপজেলার হিজলাবট গ্রামে। গাছগুলি দেখলে অবাক হতে হয়, এগুলো তেঁতুল না বটগাছ, এত বড় তেঁতুলগাছ হয়? আকারে প্রায় পঁচিশফুট ব্যাসার্ধের হবে আর লম্বায় প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ ফুট। জন্ম কবে তা কেউ বলতে পারে না। তবে স্থানীয়দের মতে, এখানে একটি নীলকুঠি আছে আর এই গাছটির বয়স এর সামসাময়িক বা এর থেকেও বেশি।
এই গ্রামে তিনটি তেতুল গাছ আছে। তারমধ্যে একটি গাছের তেতুলের রঙ ভিতরে সাদার বদলে লাল। এই লাল তেঁতুল আমাদের দেশে দুর্লভ।
স্থানীয় বয়স্করা জানান যে তারা ছেলেবেলা থেকেই এই গাছগুলোকে একই রকমের দেখে আসছেন। তাদের মতে এই গাছগুলোর বয়স ২শ বা তারও বেশি হবে। ঝড়ে ভেঙ্গে গিয়ে বড় গাছটি এখন ছোট হয়ে গিয়েছে আগে আরও বেশি বড় ছিল। স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বিরা একে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে অনেকেই এর পূজা করে।
জানা যায় অনেকেই এই গাছের তেঁতুল মনোবাসনা পূরণ হবার জন্য খায়। আর এই গাছের ক্ষতি করলে নাকি তার অনিষ্ঠ হয় তাই কেউ এই গাছের ডাল কাটতেও ভয় পায়।
কোথা থেকে এই তেতুল গাছ এসেছে তার একটি তথ্য পাওয়া গেল যে, পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাট এলাকায় একটি লাল তেতুল গাছ রয়েছে। স্থানীয়রা বলেন এর বয়স প্রায় ৫০০ বছর। এই গাছটির সাথে একজন মুসলিম পিরকে নিয়ে গল্প চালু আছে। সেই পির নাকি এই তেতুল দিয়ে বিভিন্ন রকমের রোগের চিকিৎসা করতেন। ধারণা করা যায় নদীয়া থেকে সেই পিরের কোন মুরিদের মাধ্যমে খোকসায় লাল তেতুলের আগমন ঘটতে পারে।
তেঁতুল আমাদের দেশের বসন্তকালের টকজাতীয় ফল হলেও সারা বছর পাওয়া যায়। তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও ভেষজ গুণ। তেঁতুল দেহে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী। তেঁতুল দিয়ে কবিরাজি, আয়ূর্বেদীয়, হোমিও ও এলোপ্যাথিক ওষুধ তৈরি করা হয়। পাকা তেঁতুলে মোট খনিজ পদার্থ সব ফলের চেয়ে অনেক বেশি। খাদ্যশক্তির পরিমাণ নারিকেল ও খেজুর ছাড়া সব ফলের চেয়ে অনেক বেশি। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি আছে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদান স্বাভাবিক পরিমাণে আছে এ তেঁতুল যেসব রোগের জন্য উপকারী তা হলো স্কার্ভি রোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, শরীর জ্বালা করা প্রভৃতি রোগে তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। তেঁতুল রক্তের কোলস্টেরল কমায়। মেদভুঁড়ি কমায়। পেটে গ্যাস হলে তেঁতুলের শরবত খেলে ভালো হয়। তেঁতুল খেলে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে বেশি খেলে রক্তের চাপ কমে যেতে পারে।
তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ : ১। তেঁতুল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকার ২। রক্তের কোলেস্টেরল কমায় ৩। শরীরের মেদ কমাতেও কাজ করে তেঁতুল ৪। পেটে গ্যাস, হজম সমস্যা, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী ৫। খিদে বাড়ায় ৬। গর্ভাবস্থায় বমি বমি বমি ভাব দূর করে ৭। মুখের লালা তৈরি হয় ৮। তেঁতুল পাতার ভেষজ চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয় ৯। শিশুদের পেটের কৃমিনাশক ১০। তেঁতুল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে ১১। পাইলস্ চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা হয় ১২। মুখে ঘাঁ ও ত্বকের প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে ১৩। তেঁতুল রক্ত পরিস্কার করে ১৪। বাত বা জয়েন্টগুলোতে ব্যথা কমায় ১৫। ভিটামিন সি-এর বড় উৎস ১৬। পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি সারে ১৭। পাকা তেঁতুলে খনিজ পদার্থ অন্য যে কোনো ফলের চেয়ে অনেক বেশি ১৮। খাদ্যশক্তিও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ১৯। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১৭ গুণ বেশি ২০। আর আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।
এই লাল তেতুলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা খুবই ভালো। কারণ খাদ্য ও ওষুধ শিল্পে এই লাল বায়ো কালারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি