তিনি মনে করেন
‘স্বাধীনতা হয়ে গেছে, এখন আর দুঃখ রেখে কী লাভ!’
ঢাকা: ২৫ মার্চ, কালরাত। ১৯৭১ সালের এ রাতে পাকিস্তানিরা নির্বিচারে গণহত্যা চালায় বাংলাদেশে। স্বাধীনতার পর থেকে তাই এ রাতকে ‘কালরাত’ বলে শোকাবহ পরিবেশে স্মরণ করা হয়। কিন্তু এ বছর তার উল্টো চিত্র দেখা দেখা গেছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে। কালরাতেই পুরো নভোথিয়েটারকে ঝলমলে আলোকবাতিতে সাজিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নভোথিয়েটারের মহাপরিচালক মনে করেন, এতদিন পরে “দুঃখ রেখে কী লাভ?”
২৪ মার্চ রাতে বিজয় সরণীতে অবস্থিত নভোথিয়েটারের এমন চিত্র দেখে অবাক হয়েছেন সচেতন অনেকেই। কেউ কেউ এ রাতে এমন আলোকসজ্জাকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সঙ্গে ঔদ্ধ্যত্যপূর্ণ আচরণ বলেও মন্তব্য করেছেন। তবে নভোথিয়েটারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে দেখার জন্য বলা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নভোথিয়েটারির পুরো এলাকাজুড়ে লাগানো হয়েছে আলোকবাতি। লাল, সবুজ ও বাহারি রঙের এসব আলোকবাতি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত বিশেষ আনন্দঘন দিবসে লাগানো হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষেও বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনায় এ আলোকবাতি লাগানো হবে। তবে একদিন আগেই শোকের রাতে এমন আনন্দ প্রকাশে বিস্মিত হয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
তেজকুনিপাড়ার হায়দার হোসেন নামে এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “এই রাতে নিরীহ বাঙালিদের পাখির মতো মারা হয়েছে। আতঙ্কে, ভয়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। আর এমন রাতে মরিচাবাতি দিয়ে নভোথিয়েটার সাজিয়ে কোন ধরনের দুঃখ প্রকাশ করছেন তারা, এ বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।”
স্থানীয় আরেক মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন বলেন, “আমার অবাক লাগে শোকের এ রাতে কীভাবে তারা এমন আলোকবাতি জ্বালায়। তাদের কি এতোটুকু দুঃখবোধও নেই। এ আলো জ্বলবে ২৬ মার্চ। অথচ একদিন আগে কালরাতে এ আলো জ্বালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে কষ্ট দিয়েছে তারা।”
তবে দুঃখ নয়, বিষয়টাকে আনন্দের চোখেই দেখার পরামর্শ দিয়েছেন নভোথিয়েটারের মহাপরিচালক আরশাদ হোসেন। তিনি বলেন, “স্বাধীনতা হয়ে গেছে। এখন আর দুঃখ রেখে কী লাভ। পুরো বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। যতো বেশি আনন্দ ছড়িয়ে দেয়া যায় ততোই খুশি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আনন্দকে ছড়িয়ে দিতে চাই। কালরাতে এমন আলো জ্বালা যাবে না, এ ধরনের কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে দেখলেই কোনো সমস্যা থাকে না।”
জানা যায়, গত বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো সাজানো হয় নভোথিয়েটার। তবে সেবার ২৫ মার্চে সাজানো ছিলো না। এবারই প্রথম ২৫ মার্চ থেকে সাজিয়ে তোলা হয়। অসচেনতার কারণেই এ বিষয়টি হয়েছে বলে নভোথিয়েটারের একজন কর্মকর্তা দাবি করেন।
তবে এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নভোথিয়েটারে শিশুদের জন্য প্রবেশ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএ/এফএ
নিউজবাংলাদেশ.কম