ঢাকা সিটিতে মনোনয়ন সংগ্রহের হিড়িক
ঢাকা: দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দুই ভাগে বিভক্ত এ সিটির উত্তর ও দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসে এ নিয়ে দিনভর উপচে পড়া ভীড়। প্রার্থী আর সমর্থকদের আনাগোনায় মুখর রিটার্নিং অফিস। নির্বাচন কমিশন থেকে বেঁধে দেয়া মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২৯ মার্চ। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তাই এখন ব্যস্ত মনোনয়ন পত্র সংগ্রহে।
এ পর্যন্ত ঢাকা সিটিতে মেয়র পদে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন ২২ জন। এর মধ্যে কেবল সোমবারেই নিয়েছেন সাত জন। কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পত্র নিয়েছেন ৯৬৭ জন । এর মধ্যে উত্তরে ৩৩১জন ও দক্ষিণে ৬৩৬ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। উত্তরে সাধারণ কাউন্সিলর হিসেবে ২৬৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী পদপ্রার্থী ১৬৪ জন রয়েছেন। দক্ষিণে সাধারণ কাউন্সিলর হিসেবে ৫৩৪ ও সংরক্ষিতে নারী পদে ১০২ জন মনোনয়ন নিয়েছেন।
সোমবার প্রার্থীরা নিজে উপস্থিত থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু জেলে থাকায় তার পক্ষে আইনজীবি রফিকুল হক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
উত্তরে মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক, আতিকুর রহমান ও এওয়াইএম কামরুল ইসলাম। দক্ষিণে মেয়র পদে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, সাইদুর রহমান মানিক ও শাহ আলম।
প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণের দায়ে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে কারণ দর্শানোর নোটিশ। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণের দায়ে ইতোমধ্যে ১৪ জনকে দেয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ। এক মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীর অভিযোগ জমা পড়ছে রিটার্নিং অফিসে। কাউকে মৌখিকভাবে কারণ দর্শাতে বলা হলেও কোনো কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আবার লিখিত চিঠিও দেয়া হচ্ছে। সোমবার ১৪ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে রিটার্নিং অফিস। এদেরকে আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসে অভিযোগ জমা পড়েছে। সাঈদ খোকনের সমর্থিত লোকজনের দেয়া সে অভিযোগে বলা হয়, ‘হাজী সেলিম এখনো সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেনি। এরপরও তিনি বহাল তবিয়তে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’ তার বিরুদ্ধে নারী ঘটিত কেলেঙ্কারির বিষয়ও জানানো হয় রিটার্নিং অফিসকে।
হাজী সেলিম প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, ইসি থেকে মৌখিকভাবে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হাজী মো. সেলিমকেও সতর্ক করা হয়েছে।
এ দিকে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসে অভিযোগ দেয় সাইফুদ্দিন মিলনের সমর্থকরা। তার বিরুদ্ধেও আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ আনা হয়।
রিটার্নিং অফিস থেকে হাজী সেলিমকে মৌখিকভাবে কারণ দর্শাতে বলা হলেও ১০ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও চার জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীকে লিখিতভাবে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, “১৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত প্রার্থীদের কাছে অভিযোগের প্রমাণসহ পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে তাদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণ জানাতে হবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ইসি।”
ইতোমধ্যে চার জন প্রার্থী দোষ স্বীকার করে মাফ চেয়েছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
তবে ঢাকা উত্তর রিটার্নিং অফিস থেকে কারও বিরুদ্ধে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা জানান, ‘অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। তবে কারো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, আচরণ বিধিমালা ২০১০ অনুসারে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তি তফসিল ঘোষণার পর ভোট গ্রহণের ২১ দিন পূর্বে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবেন না। তবে; ভোট গ্রহণের পূর্ববর্তী ২১ দিন প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন। এছাড়া ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার দিন সিইসি সব প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলারও অনুরোধ করেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএ/এএইচকে
নিউজবাংলাদেশ.কম