News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:২৪, ২১ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১৫:২৩, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

নির্বাচনী ‘জুয়ায়’ দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপি

নির্বাচনী ‘জুয়ায়’ দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপি

ঢাকা: বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছে বিএনপি। এরইমধ্যে আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এ অবস্থায় এ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্নে দ্বিধাদ্বন্দ্বে হাবুডুবু খাচ্ছে বিএনপি।

কারণ এ তিনটি সিটি নির্বাচন এ মুহূর্তে বর্জন করার যেমন ইতিবাচক দিক আছে, তেমনি বিএনপির মূল আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা আছে। তাই দলের প্রথম সারির নেতারাও ভুগছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তারা মূলত দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছেন।

তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার আলোকে বিএনপিকে এক ধরনের ‘জুয়া’ খেলতে হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।

সিনিয়র নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে আছে, অন্য কিছু নিয়ে ভাবছে না। দলীয় ফোরামে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরিস্থিতি সুষ্ঠু হলে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি।

নেতাকর্মীরা বলছেন, এই নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়া বিএনপির জন্য ‍জুয়া খেলার মতো। বিএনপি যদি এই নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে। অংশ নিয়ে হেরে গেলে আন্দোলন মাঠে মারা যাবে। ১৯ সালের আগে এই সরকারের পতন ও নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর অংশ না নিলে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলমান আন্দোলন জোরদার করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর যারা নির্বাচনে প্রার্থী হবে তাদের অধিকাংশই জেলে এবং আত্মগোপনে আছে এটাও নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।

নেতাকর্মীরা আরো বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আন্দোলন শিথিল করতে হবে। আর যদি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করে তাহলে আন্দোলন জোরদার করা সহজ হবে। তবে সরকার মুখে বললেও তারা চাইছে যেন বিএনপি এই নির্বাচনে না আসে। এ জন্য যা যা করা দরকার তারা তাই করবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার আলোকে জুয়া খেলতে হবে বিএনপিকে।

বিএনপি নিতা ও তেজগাঁও অঞ্চলের সাবেক এক ওয়ার্ড কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু হলে যে কোনো নির্বাচনে জয়ী হবে বিএনপি। কিন্তু সরকার চায় না আমরা নির্বাচনে যাই, আর গেলেও তারা উপজেলা নির্বাচনের মতো জোর করে কেন্দ্র দখল করবে। প্রশাসনের সহায়তায় জাল ভোট দিয়ে জয়ী হয়ে যাবে। দলকেই এখন দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

বিএনপি নেতা ও ওয়ারী এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “কীভাবে নির্বাচনে অংশ নেবো। আমি ওয়ার্ড কমিশনার ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা। আত্মগোপনে আছি। আমার এলাকার নেতাকর্মীরা কেউ জেলে, কেউ আত্মগোপনে আছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচনী প্রচারণা কীভাবে চালাবো।”

ফেসবুকে ‘বিদ্রোহী দাবানল’ নামে বিএনপির এক কর্মী নির্বাচনের বিষয়ে লিখেছেন, “আমার মতে বিএনপির সামনে দুটি পথ খোলা। এক. অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। দুই. সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া।”

অপর এক কর্মী লিখেছেন, “কারা দাঁড়াবে এই নির্বাচনে। যেখানে কোনো নেতাই আন্দোলনের মাঠে নেই। এখন কোন মুখে তারা দাড়াবে? হাজার হাজার কর্মী পলাতক। ভোট করবে কে? তার চেয়ে ভালো হবে এই নির্বাচন বর্জন করা। না হলে বিএনপি এখানেই শেষ।”

তিনি আরও লিখেছেন, “নির্বাচনে অংশ নিলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কোনো আন্দোলনে করা যাবে না। এর চেয়ে নির্বাচনে অংশ নেব না। তবে নির্বাচন হতেও দেব না! এমন আন্দোলন করা হবে যাতে ২৮ এপ্রিলের আগে সরকারের পতন ঘটে।”

আরেক কর্মী লিখেছেন, “যে যাই বলুক, বিএনপির উচিৎ হবে এই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়া। অন্যথায় বিএনপি আরো চাপে পড়বে। সরকারকে খালি মাঠে গোল দেয়ার ২য় সুযোগ দেয়া চরম ভুল হবে।”

তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে শিগগিরেই সিদ্ধান্ত জানাবে বিএনপি। নির্বাচনে অংশ নিলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলমান আন্দোলনে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

শুক্রবার চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. এমাজউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, “বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বরাবরই নির্বচনমুখী। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলে বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিএনপির দলীয় ফোরাম ও ২০ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান আন্দোলন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “আমরা এই মুহূর্তে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। এখন পর্যন্ত আন্দোলনের বাইরে আমাদের অন্য কোনো ভাবনা নেই। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন।”

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “এই মুহূর্তে জাতীয় দাবি হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার জনগণের দৃস্টি অন্যদিকে ফেরাতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। কিন্তু মনে হচ্ছে, সরকার সিটি নির্বাচন করেই ফেলবে।”

তিনি বলেন, “এখন যে পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া আসলেই কঠিন। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখাতে হবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ প্রার্থীই জেলখানায়। অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। অনেকে আত্মগোপনে আছেন। সরকার তো প্রার্থীদের মাঠে নামতেই দেবে না। সমর্থকরাও কোনো প্রচরণা চালাতে পারবে না। তাহলে নির্বাচন হবে কাদের নিয়ে?”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, “বর্তমান বাস্তবতায় সিটি নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া আসলেই খুব কঠিন। তবে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমি মনে করি।”

নিউজবাংলাদেশ/আরআর/এজে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়