News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ২০ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১৫:২০, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

আন্দোলনে ‘দর্শক’ বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিকরা

আন্দোলনে ‘দর্শক’ বিএনপি-জামায়াত জোটের শরিকরা

ঢাকা: নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছে ২০ দলীয় জোট। গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০ দলের পক্ষে এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। টানা ৭৩ দিন ধরে পালিত অবরোধ কর্মসূচির সাথে হরতালসহ অন্যান্য কর্মসচিও যোগ হয়েছে।

মূলতঃ এ আন্দোলনে প্রধান ভুমিকা পালন করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে জোটের বড় শরিক জামায়াতের অংশগ্রহণ কিছুটা থাকলেও বাকি ১৮ দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কোনও খবর জানা যায়নি। এ পর্যন্ত প্রায় ‘নিরব দর্শকের’ ভুমিকাই পালন করছে তারা। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের অন্ত নেই।

তৃণমূলের এসব নেতাকর্মীদের বক্তব্য আন্দোলনের মাঠে না থাকলে জোটের কী প্রয়োজন? ছোট ছোট এসব দলের নেতারাই পরবর্তীতে বিএনপির ওপর ভর করে নির্বাচিত হয়ে এমপি-মন্ত্রী হবেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে জোটভূক্ত কয়েকটি দলের নেতারা। তারা বলেন, ছোট দল হিসেবে সেভাবে মাঠে না থাকতে পারলেও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দলীয় জোট গঠন করা হয়। এরপর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাজী জাফরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ ২০১৪ সালের জানুয়ারির শেষে এতে যোগ দিলে ১৯ দলীয় জোটে পরিণত হয় এটি। পরবর্তীতে কমরেড সাইদ আহমেদের নেতৃত্বে সাম্যবাদী দলের একাংশ একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে জোটে যোগ দিলে এটি রূপান্তরিত হয় ২০ দলীয় জোটে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্য দলগুলো হচ্ছে জামায়াত ইসলামী, বিজেপি , ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, এলডিপি, জাগপা, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, এনডিপি, লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, পিপলস লীগ, ডিএল, সাম্যবাদী দল,ন্যাপ ভাসানী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল।

জোটে শক্তিমত্তার দিক থেকে বিএনপির পরেই জামায়াতের অবস্থান। প্রতিদিনই সারাদেশের কোথাও না কোথাও জামায়াতের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল-বিক্ষোভ করছেন। তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারও করছে পুলিশ। তাদের মিছিল ও গ্রেফতারের খবর সংবাদ মাধ্যমে আসছে। এসব ঘটনার বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন একাধিক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমে পাঠানোও হচ্ছে।

এরপরেই রয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের অবস্থান। অভিযোগ আছে, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসসহ জোটের অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সরকারের গোপন যোগসাজস রয়েছে। এ কারণে ধর্মীয় ইস্যু ছাড়া ২০ দলের আন্দোলনে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন তারা।

এর বাইরে আন্দোলনে না থাকলেও এলডিপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, জাগপা’র মতো দলগুলো গণমাধ্যমে মাঝে মাঝে বিবৃতি পাঠিয়ে আন্দোলন সমর্থনের বিষয়টি জানান দেয়। এছাড়া মাঝে মধ্যে জাগপা রাজধানীর মোহাম্দদপুরে মিছিল করে-- এ দাবি করা হয় দলটির পক্ষ খেবে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দাবি করা হয় মোহাম্মদপুর এলাকায় তারা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধানের দাবিতে  মিছিল করেছে।

ন্যাপও মাঝেমধ্যে বিবৃতি দেয়। গত বৃহস্পতিবারও সালাহউদ্দিনের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এছাড়া, কল্যাণ পার্টির মেজর জে. (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম টক শোতে অংশ নিয়ে আন্দোলনে আছেন। দলের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান গ্রেফতার হবার পর লেবার পার্টি রীতিমতো ঘুমিয়ে পড়েছে। আন্দোলনের শুরু থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন জেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তবে রাজপথে তাদের অনুপস্থিতি পর্দার আড়ালে থাকা অন্য দলগুলোর মতোই।

এদিকে, আন্দোলনে মাঠে না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া নিউজবাংলাদেশ.কমকে বলেন, “জোটের প্রধান দুটি দল হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত। তাদের সাংগঠনিক শক্তি বেশি। তারপরে রয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিস।”

তিনি বলেন, “যেখানে আমাদের শক্তি আছে সেখানে চেষ্টা করছি। আমরা  গ্রেটার রংপুরে চেষ্টা করছি। মাঠে বিএনপি-জামায়াতের ১০ জন দেখা গেলে আমাদের একজন দেখা যায়।”

তিনি অভিযোগ করেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার পরিবেশ নেই। নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছে না। গুলি করা হচ্ছে। এজন্য নেতাকর্মীরা কিছুটা ভীত। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

জাগপা’র সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান নিউজবাংলাদেশ,কমকে বলেন, “আমরা আন্দোলনে আছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি। সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা সৃস্টি না করলে জোটের শরীকদের রাজপথে উপস্থিতির বিষয়টি আরো পরিষ্কার হতো।”

আন্দোলনে নিরব দর্শকের ভুমিকা পালনের বিষয়টি অস্বীকার করে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান নিউজবাংলাদেশ.কমকে বলেন, “আমরা ছোট, তবে আমরা মাঠে আছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে. জে. মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাদেশ.কমকে বলেন, “বর্তমান অসুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেকেই দলের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারছেন না।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে একটা সংকট চলছে। ঢাকা সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মানুষের জীবনযাত্রা অবশ হয়ে গেছে। এটা রাজনৈতিক সংকটের কারণেই হয়েছে।”

সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, “২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সবার সাংগঠনিক শক্তি একরকম নয়। তারা তাদের মতো করে চেষ্টা করছে। তবে ইচ্ছা থাকলেও সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে হয়তো তারা সেভাবে রাজপথে থাকতে পারছে না।”

নিউজবাংলাদেশ.কম/একে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়