কঠোর নজরদারিতে ৫০ হাজার এনজিও
ঢাকা: দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সহিংসতা নিরসনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ওপর সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে ৫০ হাজার এনজিও।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিবন্ধিত এনজিওর সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এর মধ্যে বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে সরাসরি দাতাসংস্থা ও অভ্যন্তরীণভাবে অর্থপ্রাপ্ত এনজিওগুলো।
সূত্র জানায়, এসব এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক কর্মকাণ্ডও পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত উন্নয়ন সংস্থাগুলো তালিকার প্রথম দিকে আছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ উত্তোলন ও জমাদানের বিষয়েও নজরদারি বাড়িয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানির (অলাভজনক প্রতিষ্ঠান) অধীনে নিবন্ধিত এনজিও বা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রেখেছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
নিউজবাংলাদেশকে একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এনজিওদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাদের আগের কর্মকাণ্ডের খতিয়ান।
বাংলাদেশ বাংকের একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক করপোরেট স্যোস্যাল রেসপন্সিবিলিটির (সিএসআর) জন্য ধার্যকৃত অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে কঠোর নীতি অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব অর্থ ব্যয়ের বা বরাদ্দের বিষয়েও মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে।
জানা গেছে, যাদের এ অর্থ দেয়া হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে অর্থ ব্যয় করছে কীনা তাও খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর উপ-পরিচালক ও মুখপাত্র একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন নিউজবাংলাদেশকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনজিও ব্যুরো কঠোর নজরদারির কারণে দেশে চলমান এনজিওগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, “দাতাসংস্থা আগে সরাসরি এনজিওদের অর্থ সহায়তা দিতে পারলেও এখন আর সে সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট প্রকল্পেই তারা সহায়তা দিয়ে থাকে। এরপরও এ সংস্থার মাধ্যমে নিবন্ধিত এনজিওর সব ধরনের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।”
তিনি আরো জানান, কারো কাজে কোনো সমস্যা বা গাফলতি দেখা দিলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। এনজিও ব্যুরোর সরাসরি মনিটরিং থাকায় এক ফান্ডের টাকা আরেক ফান্ডে সরানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই বার্ষিক প্রতিবেদনের পাশাপাশি প্রতি ৩ মাস পরপর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম নিউজবাংলাদেশকে জানান, এনজিওদের কাজের ক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদপ্তর সব সময়েই কাজ করছে। এরই মধ্যে অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এনজিওদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে স্থানীয় পর্যায়ের সমাজসেবা কর্মকর্তারা ও স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, নজরদারির মধ্যে সমাজ সেবা অধিদফতরের ৩৫ হাজার, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো ২ হাজার, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ৫ হাজার, নারী ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের ৫ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো সব দাতব্য প্রতিষ্ঠান।
নজরদারি যেসব জেলায় কঠোর করা হয়েছে সেসব জেলাগুলো হলো- তিনটি পার্বত্য অঞ্চল, কক্সবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, জাফলং, ভোলা, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, কুমিল্লা, ব্রাহ্মবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও বগুড়াসহ বিভিন্ন দ্বীপসমূহ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/এটিএস
নিউজবাংলাদেশ.কম