মুসার অবৈধ সম্পত্তির তথ্য পাচ্ছে না দুদক
ঢাকা: আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী ও জনশক্তি রফতানিকারক ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুসা বিন শমসেরের (প্রিন্স মুসা) অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের বিষয়টি ধোঁয়াশাই থেকে যাচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা প্রিন্স মুসার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্যই এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে প্রিন্স মুসা বাংলাদেশ থেকে কোনো অর্থ পাচার করেনি বলে জানালেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে তার কোনো অর্থ পাওয়া যায়নি। স্যুইজারল্যান্ডের সুইস ব্যাংকে জমা থাকা ৫১ হাজার কোটি টাকার বিষয়েও কোনো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেনি দুদক। বাধ্য হয়ে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এ অনুরোধের পরে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক শীর্ষ কমকর্তা নিউজবাংলাদেশককে জানান, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে প্রিন্স মুসা তাঁর ৫১ হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে রয়েছে বলে স্বীকার করলেও এ বিষয়ে দুদকে তিনি আর কোনো তথ্য জানাননি।
জানা গেছে, সুইস ব্যাংকে থাকা এ বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থগিত করার জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন প্রিন্স মুসা। সেখানে মুচলেকা দেওয়া হয়েছে, মামলা চলাকালীন এ ব্যাংক বা টাকার পরিমাণ, হিসাব নম্বর, শাখা সম্পর্কে কোনো তথ্য অন্য কোনো সংস্থার কাছে দেওয়া যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দুদক তাদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রিন্স মুসাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।
দুদক সূত্র আরো জানায়, এক দেশ অপরদেশের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়ার জন্য এটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু প্রিন্স মুসার বিষয়ে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত না পাওয়ায় এটিও সম্ভব হচেছ না। এক্ষেত্রে দুদক দুদেশের গোয়েন্দাদের মাধ্যমে তথ্য জানার চেষ্টা করছে।
২০১১ সাল থেকে প্রিন্স মুসার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সর্বশেষ দুদকের উপপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী গত বছর ৪ ডিসেম্বর মুসাকে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় দুদকে জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেন প্রিন্স মুসা।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে মুসা বিন শমসেরের বিষয়ে নানা অসংগতি ধরা পড়ে। ২০১১ সালের ২৪ জুন তার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে তার নো ইউর কাস্টমার (কেওয়াইসি) ফর্মের সব তথ্য জানতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঐ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ড. মুসার সব ব্যাংকের স্থায়ী, চলতি, সঞ্চয়ী, ডিপিএস, এসপিডিএস, এফডিআর বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে হিসাব পরিচালিত হয়েছে বা হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কে তথ্যসহ হিসাব খোলার দিন থেকে হালনাগাদ হিসাব বিবরণী দাখিল করতে তফসিলিভুক্ত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল। দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব হিসাব তলব করলেও পরে রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রিন্স মুসা সংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পদ্মা সেতুতে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চান তিনি। এছাড়া তাঁর টাকা অবমুক্ত হলে সরকারি কর্মচারি, শিক্ষক এবং বৃদ্ধদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন। মুসা আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশের কোনো টাকা আমি নেইনি কিংবা পাচার করিনি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ‘বিজনেস এশিয়া’ম্যাগাজিন মুসা বিন শমসেরের ৭ বিলিয়ন ডলার বা ৫১ হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে আটকে আছে বলে উল্লেখ করে। মুসাকে বাংলাদেশের সবচে ধনী ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে ম্যাগাজিনটি বলে, তাঁর মূল সম্পত্তি প্রায় ১২ বিলিয়ন ইউএস ডলার।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মুসার দেশে সম্পদ বলতে শুধু ফরিদপুরের পৈতৃক ভিটায় দোতালা একটি বাড়ি, গুলশান-১ এ কয়েক বিঘা জমির উপর একটি বাড়ি এবং ডেটকো নামে একটি অফিসের কথা জানা যায়। এ ছাড়া গাজীপুরের কয়েকটি মৌজায় এবং সাভারে তার নামে এক হাজার সাত শ’ বিঘা জমি রয়েছে। জমিগুলো তিনি ১৯৭৩ সালে কিনেছেন। জমির দলিলপত্র তাঁর হাতে থাকলেও জমিগুলো তাঁর দখলে নেই।
প্রসঙ্গত, মূসার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে তার ব্যাবসায়িক অংশীদার ও বৈশাখী টেলিভিশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) টিপু আলম এবং ড্যাটকো গ্রুপের ম্যানেজার ফারুকুজ্জামানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/এফই
নিউজবাংলাদেশ.কম