অপার সম্ভাবনার ফসল শৈবাল
বংলাদেশের উপকুলীয় এলাকায় রয়েছে শৈবাল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা। আধুনিক পদ্ধতিতে এ চাষ হতে পারে অর্থ উপার্জনকারী ফসল হিসেবে । বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শৈবালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর আহমদ নিউজবাংলাদেশ.কমকে জানান, ‘‘বাংলাদেশে শৈবাল চাষ পদ্ধতি একটি নতুন উদ্যোগ এবং চাষ পদ্ধতিও খুব সহজ। গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত, দেশের উপকূলীয় জলরাশিতে ব্যাপকভাবে শৈবাল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে চাষের কাঠামো প্রতিষ্ঠাকরণে চাষীদের স্বল্প বিনিয়োগ প্রয়োজন।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘গৃহস্থালি উপকরণ, দড়ি, বাঁশ, জাল, প্লাষ্টিক, বয়া ইত্যাদি ব্যবহার করে চাষীরা সহজেই শৈবাল চাষ শুরু করতে পারে। সৈকতে জোয়ার-ভাটার অন্তর্বর্তী স্থানে অধিকাংশ শৈবাল জন্মায়। ফলে ভুমিহীন চাষীগণ খাস সরকারি অনাবাদী জলাভূমিতে বিনা বাধায় শৈবাল চাষ করতে পারে।’’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পরীক্ষামূলকভাবে ২০১০ সালে দুপ্রজাতির শৈবাল চাষ করার মাধ্যমে দেশে প্রথম এর চাষ শুরু হয়েছিল। সে সময়ে আশা করা হয়েছিল, শৈবাল চাষ করে কৃষকরা ভাগ্য ফেরাতে পারবে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই প্রকল্প খুব একটা সুলভ হয়নি। সমুদ্রে শৈবাল চাষের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলে শৈবাল বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কোস্ট ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এখন দেশে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে শৈবাল চাষ করা হচ্ছে। এ সংস্থার মৎস্য কর্মকর্তা ও রিসার্চ ফেলো মো.শফিউদ্দিন নিউজবাংলাদেশ.কমকে জানান, সামুদ্রিক শৈবাল একটি রপ্তানিযোগ্য পণ্য। বিদেশে সামুদ্রিক শৈবালের বাৎসরিক উৎপাদন প্রায় ১০ মিলিয়ন টন, যার বাণিজ্যিক মূল্য ১৫ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বে একুয়াকালচার উৎপাদনে শৈবালের অবস্থান দ্বিতীয়। শৈবাল একটি সম্ভাবনাময় জলজ উদ্ভিদ, যার পুষ্টিমান অন্যান্য জলজ প্রজাতির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সেন্টমার্টিনেই প্রায় ১৪০ ধরনের শৈবাল জন্মায়। তাছাড়া জেলা উপকূলীয় প্যারাবন এলাকাতেও ১০ প্রকারের শৈবাল দেখা যায়।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর আহমদ আরও জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমশ শৈবালের চাহিদা বাড়ছে। চাষকৃত শৈবালের ভালো মানের ঔষধি গুণ থাকায় দেশে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। এতে করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।
রিসার্চ ফেলো মো. শফিউদ্দিন জানান, শৈবালে ঔষধি গুণ থাকায় সবজি হিসেবে এই শৈবাল খাবার তালিকায় জনপ্রতি প্রতিদিন ৩ গ্রাম হিসেবে রাখলে দেশের বেশিরভাগ জনগণ টিউমার, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোগ থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি আরও বলেন, একটা সময়ে পিকেএসএফ এবং ডিএফআইডি এ চাষ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিল। এখন শুধু কোস্ট ট্রাস্ট কাজ করছে। প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন চাষীদের মাধ্যমে বছরে পাঁচশ টন উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে। তবে চাহিদার তুলনায় তারা খুব কমই উৎপাদন করতে পারছে। বর্তমানে কাঁচা শৈবাল সালাদসহ বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তাদের উৎপাদিত প্রতি ৫০ গ্রাম শুকনা শৈবালের দাম ১২০ টাকা এবং পাউডার ৫০গ্রাম দুশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি জানান, প্রাকৃতিক উৎস ছাড়াও বিভিন্ন পদ্ধতিতে শৈবাল চাষ ও উৎপাদনে আগ্রহী কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্মানো শৈবাল বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়। উপকূলীয় এলাকার স্থানীয় জনগণ একটা সময়ে ‘হাইপেনা’ শৈবাল সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে মিয়ানমারে পাঠাতো এবং কিছু শৈবাল সার হিসাবে ব্যবহার করতো।
নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম