News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ৩ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ২০:৫১, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

একচল্লিশ বছরেও হয়নি চিড়িয়াখানার জাতীয়করণ!

একচল্লিশ বছরেও হয়নি চিড়িয়াখানার জাতীয়করণ!

ঢাকা: দেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১০টি চিড়িয়াখানা থাকলেও ৪১ বছরেও কোনো জাতীয়ভাবে চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা বা ঘোষণা করা হয়নি। একারণে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব জু অ্যান্ড এ্যাকুরিয়ামসের (ওয়াজা) সদস্য হতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে দুর্লভ প্রাণি সংগ্রহ, চিকিৎসাসহ আধুনিকায়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক আজয় কুমার রায় নিউজবাংলাদেশ.কমকে জানান, জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘোষণার সিদ্ধান্তের পরেই প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন ঢাকা চিড়িয়াখানাকে জাতীয় হিসেবে গেজেট প্রকাশ করলেই হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক সম্প্রতি জানিয়েছেন, নানা কারণে বাংলাদেশ ওয়াজার সদস্যপদ পায়নি। তবে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দিয়ে এ দুটি চিড়িয়াখানার ডিজিটাল সার্ভে শেষ করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের চিড়িয়াখানা বিশ্বমানের চিড়িয়াখানায় পরিণত হবে। তখন ওয়াজার সদস্যপদ পেতে কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই মনে করেন ঢাকা চিড়িয়াখানাই জাতীয় চিড়িয়াখানা। কিন্তু আন্তর্জাতিক কেনো স্বীকৃতি নেই, এখনো হয়নি কোনো গেজেট নোটিফিকেশেন। এ কারণেই একটি জাতীয় চিড়িয়াখানা থাকা প্রয়োজন। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখানাকে জাতীয় চিড়িয়াখানা হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

অজয় কুমার রায় আরও জানান, ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানাকে বিশ্বমানের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

বুয়েট ডিজিটাল সার্ভে ও ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষ করেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে চিড়িয়াখানার প্রাণিগুলো বন্য পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানার পরিবেশ, প্রাণিদের খাঁচা ও শেডে পরিবর্তন আনা হবে। এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য একজন জাপানি জু-আর্কিটেক এবং একজন জু-কনসালটেন্টের কাছ থেকে সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে।

ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মাকসুদুল হাসান হাওলাদার নিউজবাংলাদেশ.কমকে জানান,  চিড়িয়াখানা উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় আড়াইবছর আগে একটি বৈঠক করা হয়। এখানেই মিরপুর চিড়িয়াখানাকে জাতীয় চিড়িয়াখানা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, বন বিভাগ এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে জু আইন চুড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। বন বিভাগ চাইছে চিড়িয়াখানার নিয়ন্ত্রণ নিতে, অপরদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ চাইছে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকুক চিড়িয়াখানা। এ কারণেই জু আইন চুড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিড়িয়াখানা বিষয়ক অনেক সিদ্ধান্ত নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে চিড়িয়াখানায় নানা সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।

আর ওয়াজার সদস্য পদ না পাওয়ার কারণে এ চিড়িয়াখানার আধুকিনায়নসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মিরপুর চিড়িয়াখানাকে জাতীয় চিড়িয়াখানা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, ১৯৪৭ সালে ঢাকায় সরকারি পর্যায়ে একটি চিড়িয়াখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। পঞ্চাশের দশকে ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সীমিত আকারে হাতি, চিত্রা হরিণ, বানরসহ কয়েক প্রজাতির বন্যপ্রাণী নিয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়। মিরপুর এলাকায় ’৬০ সালে চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা অনুমোদন পায়। ’৬১ সালে চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য একটি

উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করে প্রাণীদের বাসস্থান ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি, হাইকোর্ট সংলগ্ন চিড়িয়াখানা হতে বন্যপ্রাণী স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। পাশাপাশি সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। নানা পটপরিবর্তনের কারণে ’৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য মিরপুর চিড়িয়াখানা উন্মুক্ত করা হয়।

নিউজ বাংলাদেশ.কম/টিআইএস/কেজেএইচ

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়