গণমাধ্যম: এগিয়েছি আমরা, পিছিয়েছে পাকিস্তান
ঢাকা: কে এগুনো? বাংলাদেশের গণমাধ্যম নাকি পাকিস্তানের? উত্তর দিতে গিয়ে কেউ কেউ থমকে যাচ্ছিলেন। পাকিস্তানের মতো বয়সে প্রবীন আর বিশাল রাষ্ট্রের গণমাধ্যমের সঙ্গে ছোট্ট বাংলাদেশের তুলনা চলে। ঠিক পরেই যখন বাংলাদেশের বয়স, অর্থনৈতিক আর সার্বিক প্রতিকূলতার চিত্র তুলে ধরা হয়, তখন অকপটে সবাই বলে ওঠেন, নিঃসন্দেহে আমাদের গণমাধ্যম বড় বেশি শক্তিশালী, অনেক সাহসী এবং স্বাধীন।
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পূর্তিতে এ দেশের গণমাধ্যমের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কথা হয় গণমাধ্যম ও পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। সবার মুখে শোনা গেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের এগিয়ে যাওয়ার কথা।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক রাহাত খান বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে কেবল পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা দিতে নারাজ। তার মতে, এদেশের গণমাধ্যম সমসাময়িক দেশগুলোর মধ্যে অনেক বেশি এগুলো। সে তুলনায় পাকিস্তান পিছিয়ে আছে বেশ দূরে।
নিউজবাংলাদেশ.কমকে প্রবীণ এ সাংবাদিক বলেন, “আমাদের গণমাধ্যমে অনেক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। কখনও কখনও আমরা আমাদের মূল লক্ষ থেকে সরে গেছি। কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া সূচক বেশ ঊর্দ্ধমুখী।”
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র, বাক ও লেখার স্বাধীনতা। বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতোই স্বাধীনতা ভোগ করছে। পাকিস্তানি মিডিয়াও একসময় মোটামুটি স্বাধীন ছিলো। কিন্তু সেটা খর্ব হয়ে যায় যখন সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসে। তখনই দেশটির মিডিয়াকে অনেকটা আড়মোড়া করে বেঁধে ফেলা হয়েছে। ফলে তারা তাদের স্বাধীনতা হারিয়েছে।”
এজন্য দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতাকেও দায়ী করেন তিনি। রাহাত খান বলেন, “পাকিস্তানি প্রেসিডেন্টকে এমন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যে কারণে একজন ছাড়া (আসিফ জারদারি) নির্বাচিত কোনও প্রধানমন্ত্রীই তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ারও কিছু বলার ছিলো না। আমাদের এখানেও তো সামারিক শাসন ছিলো। কই, এমন পরিস্থিতি তো হয়নি। সে তুলনা করলে আমাদের বয়েসী ও সমসাময়িক দেশগুলোর মধ্যে আমাদের গণমাধ্যম শক্তিশালী, সাহসী ও স্বাধীন।”
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞা সিএম শফি সামীও মনে করেন এদেশের গণমাধ্যম সাহসী ও নির্ভীক। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেক বেশি। এখানকার সাংবাদকর্মীরা সাহসী ও নির্ভীক। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে সম্মান করা হয়। সেজন্য সংবাদপত্রগুলো বেশ শক্তভাবে কথা বলতে পারে। পক্ষান্তরে পাকিস্তানে এ ধরনের চর্চা নেই। ফলে এ তুলনায় পাকিস্তানের গণমাধ্যম বেশ পিছিয়ে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের সামরিক শাসনের সময়েও প্রেস যে ধরনের স্বাধীন মনোভাব নিয়ে কাজ করেছে, সেটা পাকিস্তানে হয়নি। সাংবাদিকরা অসংখ্য স্থানে কথা বলেন। তাদের যে পরিমাণ শক্তিশালী ভূমিকা দরকার সেটা এদেশে সংবাদকর্মীদের আছে। তবে পাকিস্তানের সংবাদকর্মীরা এতো স্বাধীন ও শক্তিশালীভাবে কাজ করতে পারে না।”
‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম মানুষের আস্থার স্থল’ বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক নেতা ও বৈশাখী টিভির প্রধান নির্বাহী পরিচালক মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, “গণমাধ্যম এখনও সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল। মানুষ অনেক কিছুতেই আস্থা রাখতে পারে না। কিন্তু কিছু হলেই গণমাধ্যমের কাছে এসে দাঁড়ায়। এটাই আমাদের মূল প্রাপ্তি। পাকিস্তানের মানুষ গণমাধ্যমকে সে আস্থারস্থলে পুরোপুরিভাবে রাখতে পারছে না। তাদের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও অনেক কথা ওঠেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কোথাও কোথাও আইনের অভাব আছে। বাধা ও প্রতিবন্ধকতাও প্রচুর। তবুও মিডিয়া যে গণমানুষের সে আস্থা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা ধরে রাখতে পারলে পাকিস্তান কেন, বিশ্বের কোনো দেশের গণমাধ্যমই আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারবে না।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/একে
নিউজবাংলাদেশ.কম