শস্যপ্রাচুর্যের বাংলাদেশে নেই কৃষি জাদুঘর!
ঢাকা: বাংলাদেশ চির সবুজের দেশ। শস্যপ্রাচুর্যের এ দেশে এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা হয়নি কোনো কৃষি জাদুঘর। এর পেছনে মূলত দায়ী আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এ জটিলতার পাশাপাশি রয়েছে লালফিতার দৌরাত্ম্য। এসব কারণে অধরা থেকে যাচ্ছে জাতীয় কৃষি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মহতী উদ্যোগ।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে একটি জাতীয় কৃষি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কৃষি উপদেষ্টা ড. সিএস করিম। ২০০৮ সালে ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী (বর্তমান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক) সম্মেলন কেন্দ্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এ নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন কৃষিসচিব আব্দুল আজিজ (এনডিসি) মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে সাব-কমিটিও গঠন করা হয়।
এ কমিটির এক সদস্য নিউজবাংলাদেশকে জানান, কমিটির সদস্যরা সম্ভাব্যতা যাচাই করে ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি এ মন্ত্রণালয়ের গঠিত টিম জাদুঘরের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলোর কৃষি জাদুঘরের আদলে দেশে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য মত প্রকাশ করে।
তিনি আরো জানান, এজন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয় রাজধানীর আসাদগেট সংলগ্ন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) নিজস্ব নার্সারি কেন্দ্রে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খাদ্যশস্য উইংয়ের পরিচালককে।
ওই সদস্য আরো বলেন, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালককে করা হয় সদস্য সচিব। সদস্যরা ছিলেন বিএআরসির পরিচালক, বারির পরিচালক (গবেষণা) ও জাতীয় জাদুঘরের একজন প্রতিনিধি।
জানা গেছে, কমিটির সদস্যরা সম্ভাব্যতা যাচাই করে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মিউজিয়াম, চট্টগ্রামের বন গবেষণা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ জাদুঘর, মেরিন ফিশারিজ জাদুঘরসহ অন্যান্য ছোট ছোট জাদুঘর।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাদেশকে জানান, দেশের উন্নয়নে কৃষির অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে জাতীয় কৃষি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি জাদুঘরে কৃষি বিষয়ক সরঞ্জামাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের বীজ, বাংলাদেশের মানচিত্র, স্মরণীয়-বরণীয় কৃষি ব্যক্তিত্বের ছবি, লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম, পুরনো ও আধুনিক দিনের কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।
আরো জানা গেছে, এ জাদুঘরে থাকবে নানা ধরনের উদ্ভিদভিত্তিক স্পেসিফিকেশন গ্যালারি, দানাদার ফল, মসলা, সবজি, তেল জাতীয় ফসলের ডিসপ্লে গ্যালারি, বিভিন্ন ফসলের বীজের ডিসপ্লে, সার, বালাইনাশক, ফল, কাঠ, বাঁশ ও ফুল জাতীয় গ্যালারি।
এছাড়া আরো যা যা থাকবে তা হলো, বিভিন্ন ধরনের মৎস্য জাতীয় গ্যালারি। এখানে মিঠা ও লোনা পানির মৎস্য প্রদর্শন করা হবে। থাকবে কৃষির উপখাত পোলট্রি ও মৎস্যখাত।
উল্লেখ্য, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের ৮৫ ভাগ মানুষের জীবনজীবিকা, আচার ও রীতিনীতি কৃষিভিত্তিক। পরিসংখ্যান ব্যুরোর কৃষিশুমারি অনুযায়ী, দেশের কৃষি পরিবারের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ ১১ হাজার। এর মধ্যে ৮০ ভাগ কৃষক পরিবার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি। বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান হলো ২২.৯ ভাগ। কৃষির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন মোট শ্রমশক্তির ৬২.৩ ভাগ মানুষ।
নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/এটিএস
নিউজবাংলাদেশ.কম