অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো এখন থেকে অনলাইনে নেওয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যরা জুম প্লাটফর্মে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একটি গাইডলাইন এবং বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে এ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটি। এগুলো মেনে পরীক্ষা নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষার্থী যদি অনলাইনে পরীক্ষা দিতে না চায় সেক্ষেত্রে তাদের চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কোনো ইউনিভার্সিটি যদি মনে করে সে অনলাইন না নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অফলাইন পরীক্ষা নেবে, সেটিও তারা করতে পারবে। অর্থাৎ কাউকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নূর গণমাধ্যমকে বলেন, আজকের বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে যারা চাইবে তারা অনলাইনে শুধু একাডেমিক পরীক্ষাগুলো নিতে পারবে। সেক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন নিতে হবে।
তিনি জানান, অনলাইন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটি একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এ গাইডলাইন ফলো করে পরীক্ষা নিতে হবে। সেখানে কীভাবে প্রশ্ন করতে হবে, কীভাবে পরীক্ষা মনিটরিং করতে হবে সব বিষয়াদি বলা আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নেওয়ার আগে তাদের সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিতে হবে।
তিনি বলেন, অনলাইনে পরীক্ষার পাশাপাশি ভাইভাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষার স্বচ্ছতার জন্য সব ধরনের কৌশল নিতে বিশ্বিবিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে। সেজন্য একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ঈদের পর থেকেই যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে অনলাইনে পরীক্ষা নিতে পারবে।
করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়া সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার যায় কি না তার জন্য একটি কমিটি করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার কমিটি সভা হয়।
সূত্র জানায়, সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শর্ত সাপেক্ষে অনলাইনে একাডেমিক পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব স্তুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময় অনলাইনে ক্লাস হলেও হচেছ না কোনো পরীক্ষা। ফলে দীর্ঘ সেশনজটের মুখে পড়তে যাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। এ সংকট উত্তরণে অনলাইনে পাবলিক ও একাডেমিক পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে দুটি কমিটি করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এরই মধ্যে উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে করা কমিটির সদস্যরা কীভাবে অনলাইন পরীক্ষা নেওয়া যায় তার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। সেই রূপরেখা চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠকে বসে কমিটির সদস্যরা। সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে তৈরি করা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি বুধবার (৫ মে) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে অনলাইনে সব বর্ষের চূড়ান্ত (ফাইনাল) পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে।
তবে কোন শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এ পদ্ধতিতে আসতে না চায় তবে তাকে সেই স্বাধীনতা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যে শিক্ষার্থী অনলাইনে পরীক্ষা দেবে না তিনি পরে সরাসরি পরীক্ষা দিতে পারবেন।
অনলাইনে পরীক্ষা নিতে গত ২৪ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেণি ও পাবলিক পরীক্ষা অনলাইনে আয়োজনের জন্য সুপারিশ করতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষা অনলাইনে গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের জন্য আরেকটি কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগমকে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/ডি